ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ১৬ মে ২০১৭

আমের বাম্পার ফলন

আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে সপ্তম। এ সংবাদ যেমন আমাদের আশান্বিত করে তেমনি ৫ বছরের ব্যবধানে আমের উৎপাদনে এক ধরনের হরমোনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেখা যাচ্ছে ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে সেখানে কালটার ব্যবহারের ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টনে। চলতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে বলে ধারণা আম চাষীদের। রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলায় আম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত। তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় আমের রাজধানী। এখানকার নয়নাভিরাম আমবাগান দেখলে যে কেউ আবেগের বন্যায় খুশিতে ভাসবে। এখন আমবাগানের যে প্রান্তে দৃষ্টি যাবে শুধু থোকা থোকা আম দেখা যাবে। গত বছর আম রফতানি করা হয়েছে বিদেশে ৩০০ টন, আর প্রতিবছর আমের উৎপাদন প্রায় ১ মিলিয়ন টনÑ এমন তথ্য ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির। আমের বাম্পার বা অধিক ফলনে দেশে যে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে তা বলাইবাহুল্য। আম যে শুধু আমাদের পুষ্টি চাহিদাই পূরণ করছে তা নয়, এখন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে, যে কারণে আম উৎপাদনে চাষীদের মনোযোগ বাড়ছে। রাজশাহী বিভাগে আমের ফলন সর্বাধিক। এখানে পরিকল্পিত বাগান আম চাষীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। মাটি ও প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশের কারণে এখানে আমের চাষ হয়ে আসছে। যে কারণে আমের বাগান করা এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আকর্ষণ। এতে সবাই কমবেশি লাভবান হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারত, পাকিস্তানসহ একাধিক দেশে কালটার নামক হরমোনের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে শুধুমাত্র আমের ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে। বাংলাদেশেও বর্তমানে এর ব্যবহার বাড়ছে, লক্ষ্য একটাইÑ ফলন বৃদ্ধি। বলা হয়ে থাকে কালটার এমন এক জাতীয় হরমোন যা মুকুল আসতে বাধ্য করে। আর মুকুল আসলে যে ফলনও বাড়বে, বাড়বে উৎপাদনও এ তো জানা কথা! কিন্তু দেশে এখনও কালটারের অনুমোদন নেই। আম চাষীরা এই হরমোন সংগ্রহ করে ভারত থেকে। যেহেতু দেশে এখন ৯৬ ভাগ আম চাষীই কালটার ব্যবহার করছে, আর ৯০ শতাংশ আম বাগানেই এখন এই হরমোন ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই এর উপযোগিতা এবং সামগ্রিক বিষয় তথা এর ভাল-মন্দ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের চিন্তা করা উচিত। অভিজ্ঞ আম চাষীদের যেমন ধারণা আছে কখন কী ধরনের কী পরিমাণ কীটনাশক, সার প্রয়োজন তেমন নবাগতদের ধারণা লাভে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। আর এ কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখাও বাঞ্ছনীয়। রসালো ফল আমের চাহিদা ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা যাতে ফরমালিন প্রয়োগ করতে না পারে তার জন্য আমের মৌসুমে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখাও জরুরী। প্রকৃতি উদার ভাবে যা দিচ্ছে তা যেন কোন নিষ্ঠুর, বিবেকহীনের কারণে অনিষ্টের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়- এমনটাই প্রত্যাশা।
×