ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাসিনো খুলছে জাপান

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্যাসিনো খুলছে জাপান

জুয়াখেলা যত ধরনের আছে তার বেশিরভাগই জাপানে নিষিদ্ধ। তারপরও জাপানীরা একটু আধটু জুয়া খেলতে ভালবাসে। পিনবলের আরেক সংস্করণ পাচিনকো থেকে বছরে তাদের আয় হয় ২০ হাজার ৩শ’ কোটি ডলার। এর সঙ্গে লটারির টিকেট এবং ঘোড়া, নৌকা ও বাইসাইকেল রেস যোগ করা হলে যে জুয়াশিল্পটি দাঁড়ায় সেটাও এক বিশাল শিল্প। বলাবাহুল্য ঘোড়া, নৌকা ও সাইকেল রেস- শুধু এই বাজিগুলোই জাপানে অনুমোদিত। পাচিনকো খেলোয়াড়রা বিশ্বের শীর্ষ জুয়ার আসর ম্যাকাওয়ের সমস্ত ক্যাসিনোগুলোর সমষ্টিগত আয়ের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। সেই জাপানে এখন ক্যাসিনো ব্যবসাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে সরকারের আর বাড়ানোর জন্য। অবশ্য তার জন্য যে কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তা নয়, নাগরিকদের বুঝাতে হয়েছে যে জুয়াখেলা সংক্রান্ত প্রচলিত আইনকানুন শিথিল করা দরকার। গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন শেষে পার্লামেন্টে ক্যাসিনোকে বৈধতা দিয়ে আইন পাস হলে দেশের পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকে একটা জরিপ চালায়। তাতে এই পদক্ষেপের পেছনে শতকরা ১২ ভাগ জনসমর্থন পাওয়া যায়। সরকারের শরিক দল কোমিটোর নেতা বিলটির বিরুদ্ধে ভোট দেন। সমালোচকরা বলেন, এই আইন দেশে জুয়ার সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী এ্যাবে ক্যাসিনোর সমর্থনে বলতে গিয়ে বলেন যে, ক্যাসিনো হবে পরিবারবান্ধব রিসোর্ট, যেখানে হোটেল আছে দোকান আছে, সম্মেলন করার সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলোর একটা অংশমাত্র। কিন্তু ক্যাসিনোর ব্যাপারে কেন তার এত উৎসাহ, জাপানের মতো পান্ডুর অর্থনীতিতে তা বুঝতে পারা কঠিন নয়। এসব বিশাল বিশাল কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে গেলেই ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েনের অর্থনৈতিক তৎপরতা সৃষ্টি হবে। আর এগুলো চালু হয়ে গেলে বছরে আরও ২ ট্রিলিয়ন ইয়েন যোগ হবে অর্থনীতিতে এবং এর সিংহভাগই আসবে পর্যটন থেকে। জাপানে ক্যাসিনো ব্যবসার খানিকটা বাগানোর জন্য বিদেশী ক্যাসিনো মালিকরা ইতোমধ্যে লবিং করতে শুরু করেছেন। লাস ভেগাস স্ট্যান্ডস, এমজিএস রিসোর্ট ও হার্ডরক কাফে ইন্টারন্যাশনালসহ অনেকে লাইসেন্স ও স্থানীয় অংশীদার খোঁজার চেষ্টা করছে। তবে কতগুলো রিসোর্টকে এই অনুমতি দেয়া যায় এবং কোথায় দেয়া যায় তা নিয়ে আমলারাও আইনকানুন ঘাঁটাঘাঁটি করছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই জায়গাটাই ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠতে পারে। রাজনীতিকদের মধ্যে কেউ কেউ আবার প্রবেশ কর বসিয়ে স্থানীয়দের ক্যাসিনোতে যাওয়া নিবৃত্ত করতে চান। পাচিনকো আসক্তির বিরূপ প্রভাব তাদের এমন চিন্তার অন্যতম কারণ। পাচিনকো ব্যবসা তুঙ্গে উঠেছিল ২০ বছর আগে। সেই অবস্থা থেকে এই শিল্প প্রায় ৪০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। তারপরও সারাদেশে প্রায় ১১ হাজার পাচিনকো পার্লার এবং হাজার হাজার আসক্ত রয়ে গেছে। ইয়াকোথামার মেয়র ক্যাসিনো ব্যবসার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। প্রথম তিনটি ক্যাসিনো রিসোর্টের একটি এই ইয়াকোহামায় হবার কথা। কিন্তু স্থানীয় জনগণের বিরোধিতার মুখে মেয়র তার আগের সমর্থন গুটিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি এক জরিপে ৭৫ শতাংশ জাপানী জানিয়েছে যে তারা তাদের বাড়ি-ঘরের কাছে ক্যাসিনো হোক তা চান না। ওসাকার কর্মকর্তারা এই সমস্যা মোকাবেলার একটা উপায় হাজির করেছেন। তারা ওসাকা বে’র একটি কৃত্রিম দ্বীপে ক্যাসিনো নির্মাণ করতে চান। এই ক্যাসিনোর আকর্ষণ হবে ট্যুরিস্টরা এবং প্রধানত পয়সাওয়ালা চীনারা। গত বছর জাপানে ট্যুরিস্ট এসেছিল ২ কোটি। সরকার এই সংখ্যাটি ২০২০ সাল নাগদ দ্বিগুণ করতে চান। ট্যুরিস্টরা জাপানে প্রতিবছর সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ইউয়ান ব্যয় করে থাকে। সরকার সেটাও দ্বিগুণে উন্নীত করতে চান। ক্যাসিনো চালু হয়ে যাবার পরও জাপানকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তার একটা হচ্ছে ম্যাকাও, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের তরফ থেকে কঠোর আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। তবে জাপানের দিক থেকে একটু সুবিধা হচ্ছে এই যে, জাপানী খাবার ও আতিথেয়তা অনেক খদ্দেরের মন জয় করতে পারবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×