ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

আরএসএফের হামলায় সুদানের উত্তর করদোফানে প্রায় ৩০০ জন নিহত

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৬ জুলাই ২০২৫

আরএসএফের হামলায় সুদানের উত্তর করদোফানে প্রায় ৩০০ জন নিহত

ছ‌বি: সংগৃহীত

সুদানের একটি মানবাধিকার আইনজীবী সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি লইয়ার্স’ জানিয়েছে, উত্তর করদোফান রাজ্যে প্যারামিলিটারি বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং প্রায় ৩০০ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে শিশুসহ গর্ভবতী নারীও রয়েছেন।

সোমবার রাতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, আরএসএফ বাহিনী শনিবার উত্তর করদোফানের বারা শহরের আশপাশের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায়। বারা শহর বর্তমানে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলার শিকার একটি গ্রাম শাগ আলনোমে "ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ" চালানো হয়েছে বলে জানায় তারা। সেখানে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকে ঘরের ভেতর পুড়ে মারা গেছেন, আবার অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে আরএসএফ বাহিনী ৩৮ জন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে এবং বহু মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন রবিবার হিলাত হামিদ নামের আরেকটি গ্রামে আরএসএফ আবার হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৬ জনকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে গর্ভবতী নারী ও শিশুরাও ছিলেন।

ইমার্জেন্সি লইয়ার্স জানায়, এসব গ্রামে কোনো সামরিক স্থাপনা বা লক্ষ্যবস্তু ছিল না, তাই এ হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তারা এই বর্বরতার জন্য আরএসএফ নেতৃত্বকে সরাসরি দায়ী করেছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) জানায়, ওই অঞ্চলের সংঘর্ষের ফলে শাগ আলনোম ও আল-কোরদি গ্রাম থেকে ৩,০০০-এর বেশি মানুষ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই পাশের বারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এর আগেও আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। তারা জানায়, আরএসএফ যেসব এলাকা দখল করেছে সেখানে লুটপাট, সহিংসতা এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।

আরএসএফ বাহিনীর নেতারা বলছে, যারা এ ধরনের অপরাধে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

২০২৩ সাল থেকে সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যেই ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের মুখোমুখি।

চলমান সংঘর্ষের মধ্যে দেশজুড়ে অনাহার, কলেরা ও অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল, ত্রাণযান ও অন্যান্য অসামরিক স্থাপনাও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে নতুন অভিযান শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আইসিসির শীর্ষ কৌঁসুলি নাজহাত শামীম খান বলেন, তার অফিসের কাছে “যথেষ্ট প্রমাণ আছে” যে দারফুরে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটছে।

তিনি আরও জানান, তার দল পশ্চিম দারফুরে সংঘটিত অপরাধগুলো নিয়ে কাজ করছে এবং পাশের দেশ চাদে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

নাজহাত শামীম খান বলেন, “দারফুরের মানবিক সংকট সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে। দুর্ভিক্ষ তীব্র হচ্ছে, পানি ও খাবার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এখন সাধারণ চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সূত্র: আল জাজিরা

এম.কে.

×