ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

ইউরো জয় আমার ক্যারিয়ার সেরা সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

ইউরো জয় আমার ক্যারিয়ার সেরা সাফল্য

যেন সুখের সপ্তম স্বর্গে বসবাস করছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। তারকা এই ফুটবলার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্বর্ণসময় অতিবাহিত করছেন। যার নমুনা আরেকবার মিলেছে ৯ জানুয়ারি ফিফার সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল এ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে। যেখানে অনুমিতভাবেই ২০১৬ সালের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার রোনাল্ডো। জুরিখে জমকালো আয়োজনে সি আর সেভেনের হাতে ফিফা সেরার এ্যাওয়ার্ড তুলে দেন সংস্থাটির সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্টিনো। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি ও এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফরাসী ফরোয়ার্ড এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানকে পেছনে ফেলে সবার সেরা হয়েছেণ ৩১ বছর বয়সী মহাতারকা। বছরজুড়ে ব্যক্তিগত দুর্দান্ত পারফর্মেন্স এবং ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে মোট চারটি শিরোপা জেতা রোনাল্ডোর নতুন চালু করা ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ খেতাব জেতা যেন অবধারিত ছিল! দ্বিতীয় হওয়া জুরিখে হওয়া অনুষ্ঠানেই আসেননি। এটি পর্তুগাল অধিনায়কের দ্বিতীয় ফিফা সেরা পুরস্কার। এর আগে তিনি ২০০৮ সালে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকতে প্রথমবার গৌরবময় এ পুরস্কার জিতেছিলেন। এরপর একীভূত হওয়া ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন দুইবার। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। সবমিলিয়ে চারবার ফিফা সেরা পুরস্কার পেলেন সুদর্শন সুপারস্টার রোনাল্ডো। ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন ও ফিফা ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একীভূত হয়ে পুরস্কার দেয়। যার নাম ছিল ফিফা ব্যালন ডি’অর। এবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফের আলাদা হয়েছে পুরস্কার দুটি। গত বছর সাফল্যে ভাস্বর ছিলেন রোনাল্ডো। দেশকে প্রথমবারের মতো জিতিয়েছেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ছাড়াও জিতেছেন উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি। এমন স্বর্ণসাফল্যেরই স্বীকৃতি পেলেন সময়ের অন্যতম সেরা তারকা। গেল বছর ক্লাবের হয়ে মোট ৪২ গোল ও দেশের হয়ে ১৩ গোল করেন রোনাল্ডো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গত আসরে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করা ছাড়াও চার গোলে সহায়তা করেন। গত মৌসুমে লা লীগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ গোল করেছিলেন রানার্সআপ হওয়া রিয়ালের এই তারকা ফরোয়ার্ড। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন পাঁচটি গোল। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১টি গোল করেছেন। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে দেশকে প্রথম শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দেয়া রোনাল্ডো চোট পেয়ে ফাইনালের শুরুতেই ছিটকে পড়েছিলেন। তবে তিন গোল করে ও সতীর্থদের দিয়ে দুটি করিয়ে দলকে ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বছরের শেষভাগে তো ক্লাব বিশ্বকাপ মাতান। ফাইনালে করেন রেকর্ডগড়া হ্যাটট্রিক। ইতোমধ্যে গত ডিসেম্বরেই ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রোনাল্ডো। এবার কাক্সিক্ষতভাবে জিতলেন ফিফা সেরা এ্যাওয়ার্ড। রোনাল্ডো চারবার সেরার খেতাব জিতলেও এখনও সবার উপরে আছেন মেসি। টানা চারবারসহ মোট পাঁচবার ফিফা সেরা (ব্যালন ডি’অরসহ) হয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ১৯৫৬ সাল থেকে শুরু হয় ব্যালন ডি’অর। আর ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার এ্যাওয়ার্ড চালু হয় ১৯৯১ সালে। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুটি পুরস্কার আলাদাভাবে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই দেখা যেত একই ব্যক্তির হাতে উঠছে দু’টি পুরস্কার। যে কারণে ২০১০ সাল থেকে এক চুক্তির মধ্য দিয়ে ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরা একীভূত করা হয়। সেই থেকে ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দিয়ে আসছিল ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন ও ফিফা। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে আবারও পুরস্কার দুটি আলাদা হয়ে গেছে। গত বছরও গৌরবময় এ দুটি পুরস্কার মেসির শোকেসে স্থান পেয়েছিল। কিন্তু এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ডোর কাছে মুকুট হারালেন বার্সা তারকা। তাই হয়ত মনের দুঃখেই জুরিখের গালা অনুষ্ঠানে যাননি মেসি। শুধু মেসিই নন, বার্সিলোনার কোনো ফুটবলারই ফিফার অনুষ্ঠানে যাননি। অবশ্য এজন্য অজুহাতও দেখিয়েছে কাতালানরা। বুধবার কোপা ডেল রের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ আছে তাদের। এ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে ভ্রমণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাবটি। এমন সিদ্ধান্তের জন্য মেসিদের এ্যাওয়ার্ড জিততে না পারাকেই কারণ মনে করছেন অনেকে। এ্যাওয়ার্ড জয়ের পর উচ্ছ্বসিত রোনাল্ডো বলেন, আমার জাতীয় দল, রিয়াল মাদ্রিদ, আমার ট্রেনার, এখানে আসা আমার পরিবার, আমার পুত্র, আমার ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। ২০১৬ আমার ক্যারিয়ারের সেরা বছর। এই ট্রফি প্রমাণ করে যে মানুষ অন্ধ নয় এবং তারা খেলা দেখে। দারুণ ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে আমি যা কিছু জিতেছি, অবিশ্বাস্য এই বছরটি আমি কখনও ভুলতে পারব না। আমাকে ভোট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার বেশি কিছু বলার নেই। আমি মনে করি, এই পুরস্কারই কথা বলছে। ফিফা সেরা হওয়ার পর ফিফা ডটকমকে একান্ত সাক্ষাতকার দিয়েছেন রোনাল্ডো। সেখানে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, আপনার ক্যারিয়ারের এত এত সাফল্যময় বছর, সেখানে ২০১৬ সালটা কোথায় থাকবে? জবাবে পর্তুগীজ তারকা বলেন, যখন থেকে খেলা শুরু করেছি তারপর এটাই আমার সেরা বছর। এতে কোন সন্দেহ নেই। বছরের পর বছর এমন সাফল্যের রহস্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো রহস্য নেই (হাসি)। আমি আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করি। আমি এমন একটা দলে খেলি যারা আমাকে এসব ট্রফি জেতার সুযোগ করে দিয়েছে। পর্তুগালের হয়েও ইউরো জেতাটা বিশাল ব্যাপার। আমি আবার বলব, এটা আসলে স্বপ্নের মতো বছর। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে জয়সূচক পেনাল্টিটা আপনার। ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক। কিন্তু ইউরোর ফাইনালটা একটু অন্য রকম। খেলা শুরুর অল্প সময় পরেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। তখন কেমন লাগছিল? সি আর সেভেন এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে খুবই জটিল পরিস্থিতি ছিল সেটা। আমি ম্যাচটা শুরু করেছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারলাম না। খুব নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে, একবার ড্রেসিংরুমে গেলাম। কিন্তু সেখানে ভাল লাগছিল না দেখে আমার মাঠে চলে এলাম। আসলে কিছু বলার দরকার নেই আমার। সেদিন কী করেছি সেটা তো সবাই দেখেছে। ছবি তো আর মিথ্যা বলে না। আমি সত্যিই খুব নার্ভাস ছিলাম। ২০১৬ সালের অনেক সাফল্যের ভিড়ে যদি একটা মুহূর্ত বেছে নিতে হয়, কোনটাকে নেবেন? এ প্রশ্নে রোনাল্ডো বলেন, পর্তুগালের হয়ে ইউরো জয়। অন্য ট্রফিগুলোকেও অবহেলা করছি না। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ক্লাব বিশ্বকাপ সবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কিছু জেতা আসলেই বিশেষ। ২০১৭ সালের লক্ষ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর যা ছিল তাই করার চেস্টা করব। ট্রফি জেতা, অনেক গোল করা। দলগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত বেশি পারা যায় ট্রফি জেতা।
×