ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু শিক্ষায় সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৭

শিশু শিক্ষায় সতর্কতা

শিশুমন কোমল, নরম মাটির সঙ্গে তার তুলনা চলে। নরম মাটিকে যে কোন রূপ দেয়া যায়, শিশুর মনের ওপর চাপ দিয়ে বা প্রভাব বিস্তার করেও তাকে অনাকাক্সিক্ষত রূপ দেয়া সম্ভব। তাই শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে সুষ্ঠু শিক্ষা অপরিহার্য। আর সে কারণেই বাঘা বাঘা সব ‘বড়’ মানুষ ও শিক্ষাবিদ শিশুপুস্তক রচনা এবং প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যুগের সঙ্গে শিক্ষা উপকরণে যৌক্তিক পরিবর্তন আসাটা অস্বাভাবিক নয়, বরং সেটাই প্রত্যাশিত। পাঠ্যপুস্তকের লেখকসূচিতে আগের লেখক বাদ পড়তে পারেন অথবা একই লেখকের ভিন্ন রচনার সন্নিবেশ ঘটতে পারে। এমনকি নতুন নতুন লেখকদের সংযুক্তিও ঘটতে পারে। তবে সেসবই হতে হবে সুবিবেচনাপ্রসূত এবং কল্যাণের জন্য। একজন লেখকের কোন রচনাকে বিকৃত করার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া বানানের ব্যাপারেও থাকতে হয় অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক। কারণ ছাপার অক্ষরকে অত্যন্ত সমীহ ও বিশ্বাস করে থাকে কোমলমতি শিশুরা। একবার ভুল বানান তার মস্তিষ্কের কোষে প্রোথিত হয়ে গেলে পরে সেখানে সঠিক বানানটির স্থান গ্রহণ অসম্ভব না হলেও জটিল ও কঠিন হয়ে থাকে। কথাগুলো সবারই জানা, তবু পুনরায় উচ্চারণ করতে হচ্ছে বিশেষ কারণে। সেটি হলো এবার শিশুদের কিছু পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের তুঘলকি কা- ঘটেছে। এ অকাজ নিয়ে যেমন সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় বইছে, তেমনি তার অভিপ্রায় এবং উদ্দেশ্যের পেছনে প্রতিক্রিয়াশীল উগ্রবাদী মনোভাব সক্রিয় ছিল কিনাÑ সে প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রথম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’-এর বর্ণ শিখি অধ্যায়ে ‘ও’ বর্ণ শেখাতে গিয়ে একটি কন্যাশিশুর গায়ে ওড়না জড়িয়ে থাকার ছবি দিয়ে নিচে লেখা হয় ‘ওড়না চাই’। প্রথম শ্রেণীর একটি শিশুকে এ ধরনের পোশাক দিয়ে বর্ণ শেখানোর চেষ্টা হাস্যকর। একই বইয়ের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি ছাগল গাছ থেকে আম খাচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’-এর ৬৮ পৃষ্ঠায় কুসুম কুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় শব্দ যেমন উল্টোপাল্টাভাবে ছাপা হয়েছে, তেমনি ভুল শব্দও ছাপা হয়েছে। এক জায়গায় ‘চায়’কে ‘চাই’ হিসেবে ছাপা হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পাঠ্যবইয়ে শিশু-কিশোরদের যে পাঠ্যক্রম পড়ানো হতো তা ২০১২-১৩ সালে এসে আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করে। এই সংস্কারের ফলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে পায় পাঠ্যবই। কিন্তু তিন বছর না যেতেই অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শুদ্ধ হওয়া পাঠ্যবইগুলো জামায়াত-হেফাজতের খপ্পরে এসে পড়েছে কিনা সেটি পর্যবক্ষক মহলের জিজ্ঞাসা। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী হেফাজতে ইসলাম এবং তাদের ভাবাদর্শ কিছু আমলা, মাদ্রাসার কিছু কর্মকর্তা ও কথিত বিশেষজ্ঞ এক হয়ে কৌশলে পাঠ্যবইয়ে এসব পরিবর্তন এনেছে। অবশ্যই এর প্রতিকার জরুরী। উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই দেয়ায় তাদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। এ কাজের জন্য সরকারের প্রশংসা প্রাপ্য। আমরা আশা করব ভুলেভরা পাঠ্যবই সংশোধন করে নতুনভাবে ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুনরায় বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জনকণ্ঠকে যথার্থই বলেছেন, হেফাজতের চেতনায় নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষা ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের ভুল ও বিকৃতির দায় তিনি কিভাবে এড়িয়ে যাবেন? দায়ী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি।
×