ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া

আসতে ‘লেট’ হয়েছে নতুন বছরের ইংরেজী নববর্ষ উদযাপিত হলো কয়েকদিন আগে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর এই নতুন বছর শুরু। কিন্তু এবার তা হয়নি। রাত ১১টা বেজে ৬০ মিনিটের ঘরে ঘড়ির কাঁটা তখনও আসেনি। এসেছে এক সেকেন্ড পরে। অর্থাৎ নতুন বছর শুরু হয়েছে এক সেকেন্ড পরে। এটাই নতুন বছরের প্রকৃত সূচনা। পৃথিবী ঘুরছে দুরকমভাবে। একটা লাট্টুর মতো, এটাকে বলা হয় আহ্নিকগতি। আরেকটা বার্ষিকগতি। এটা হচ্ছে সূর্যের চারপাশে ঘোরা। পুরোটা ঘুরতে লাগে ৩৬৫ দিন। এটাকে বলা হয় বার্ষিকগতি। লিপ ইয়ারের বছরে যেমন যুক্ত হয় একটি বেশি দিন। তেমনি এ বছর লিপ সেকেন্ডে যুক্ত হয়েছে বাড়তি একটি সেকেন্ড। পৃথিবী যে ঘুরছে তার গতি খানিকটা কম হওয়ার কারণে এটা করতে হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবী যখন নিজে ঘুরছে তখন সেই ঘোরার গতি কম-বেশি হতে পারে। এর জন্য একটা দিন অন্য কোন একটির চেয়ে ছোট বা বড় হয়ে যেতে পারে। সময়ের এই ব্যবধান বেড়ে গেলে যোগ করা হয় ১টা সেকেন্ড। এবার তাই হয়েছে। বিজ্ঞানী গবেষক তথা প-িতরা এই এক সেকে- বা আধ সেকেন্ডের এ পার্থক্য বুঝবেন, কিন্তু সাধারণ আমজনতার কাছে এই সময়টুকু কোন কিছুই নয়। দেশে দেশে মানুষ বেশ আগে থেকেই শুরু করে বর্ষবরণÑ শুরু হয়ে যায় আনন্দোৎসব, নৃত্য, শুরু করে খানাপিনা। আনন্দ উচ্ছ্বাস আর নৃত্যগীতে মেতে ওঠে। পশ্চিমা দেশের লোকজনের তো কথাই নেইÑ বহু স্থানে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের। লোকে যেমন ট্রেনের জন্য স্টেশনে বসে থাকে তেমনি তা লেট করে এলে কেউ গোমড়ামুখে তাকে গ্রহণ করে না। তেমনি পৃথিবীর ট্রেন এক সেকেন্ড দেরি করে এলেও বহন করে আনা নববর্ষকে বরণ করে নেয় সবাই। এবারও তাই হয়েছে। রেল স্টেশন ভাড়া! ভারতের নতুন দিল্লীতে দিন কয়েক আগে রেল কর্তৃপক্ষের এক আলোচনা হচ্ছিল রেলের আয় কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে। ওই দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তারা সে সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করল, সে দেশের যেসব স্টেশন তেমন ব্যস্ত থাকে না সেগুলো বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া গেলে রেলের আয় বাড়তে পারে। তাদের মতে, এ ধরনের স্টেশনের প্ল্যাটফরম বা প্রাঙ্গণ যদি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া যায় তা হলে লোকে সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারবে। আর তাতে আয় হবে রেলের। প্রকাশিত খবরে এমনটা কথা জানা গেছে। আরও জানা গেছে সভায় উপস্থিত রেলমন্ত্রী বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রস্তাবটির ব্যাপারে। পরে কি হয়েছে জানা যায়নি। প্রস্তাবটি কম ব্যস্ত রেল স্টেশনগুলো বিয়ের জন্য ভাড়া দেয়ার উদ্যোগ ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ নেবেন কি নেবেন না সেটা তাদের ব্যাপার। এ ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলা যায়, প্রস্তাবটি বেশ মজার। এমন অনেক স্টেশন হয়ত তাদের আছে যেগুলোতে সারাদিনে মাত্র দুটো কি একটা ট্রেন আসে বা যায়। ওই সময়ের পরে সর্বক্ষণ ফাঁকা পড়ে থাকে জায়গাগুলো। গরু-ছাগল চরে বেড়ায় হয়ত। দিনে বা রাতে কোন এক সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য জায়গাটা ভাড়া দিলে ওই সব এলাকার মানুষেরও উপকার হতে পারে, রেল কোম্পানিও দুটো পয়সা পেতে পারে। যাক গে, ওটা তাদের ব্যাপার, যেটা ভাল হয় করুক। আমরা শুধু এ প্রসঙ্গে বলতে পারি আমাদের দেশের কথা। আমাদের দেশের ব্যাপারে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। তবে অন্য সব কথা বাদ দিয়ে শুধু দুটি বিষয় এখানে বলা দরকার। আমাদের রেললাইন যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে কিছু দূর পর পর রয়েছে স্টেশন। মাঝখানে দেখা যায় অনেক লেভেল ক্রসিং। এমন বহু লেভেল ক্রসিং রয়েছে যেগুলোতে গেট নেই। কোন কোনটিতে গেটম্যানই নেই। তাই সেগুলো প্রায় অরক্ষিত, বিপজ্জনক। এগুলোতে গেট এবং গেটম্যান দেয়া খুব জরুরী। এই এক কথা। দু’নম্বর কথা হচ্ছেÑ ঢাকা শহরকে বাঁচাতে গেলে এর যানজট দ্রুত কমাতে হবে। এখন যে হারে এই শহরে মানুষ এবং লোক বাড়ছে তাতে দু’আড়াই কোটির জায়গায় ঢাকার লোকসংখ্যা ১০ কোটি হতে ১০ বছরও হয়ত লাগবে না! ঢাকার এই অবস্থা যাতে না হয় সে জন্য রেললাইন রাখতে পারে বড় ভূমিকা। ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ রয়েছে এমন সব দূরবর্তী স্থানে বসানো দরকার লোকাল ট্রেন। প্রয়োজনে নতুন লাইন বসাতে হবে, আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন ট্রেনে করে কর্মস্থলে আসতে পারবে, নতুন লাইন ও ট্রেন যদি দেয়া যায় বহু লোক তাহলে ঢাকা ছেড়ে আশপাশের নিজ এলাকায় চলে যেতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। অফিস টাইমে বা ছুটির পর লোকজন ট্রেন পাবে একটার পর একটা। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে, এর যানজট কমাতে চাইলে রাজধানীর আশপাশ থেকে লোকের আসা এবং যাওয়ার সুন্দর-সহজ বেল ব্যবস্থা দরকার। এটা করতে পারলে ঢাকা বাঁচবে। কমবে যানজট। নইলে নয়।
×