ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণভবনে মেয়র আইভীর সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ আমলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়- আমরা তা প্রমাণ করেছি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগ আমলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়- আমরা তা প্রমাণ করেছি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে ‘চমৎকার সুষ্ঠু নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় আমরা তা প্রমাণ করেছি। এই নির্বাচন নিয়ে খোদ বিএনপিও কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। আর কিছু বলার মুখও তাদের নেই। বিএনপির অতীতের দুঃশাসন, শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করেছে, সেই ঐক্যের ধারা সারাদেশেই বজায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। আইভীকে পুনর্নির্বাচিত করার মধ্যদিয়ে নারায়ণগঞ্জের জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার গুরুত্ব দিয়েছে। শুক্রবার রাতে গণভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে পুনর্নির্বাচিত মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী সাক্ষাত করতে এলে তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পেরেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মুখেও কোন কথা নেই। তবে এখন বলছেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তের! কিন্তু আমার প্রশ্ন- আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে কারচুপি হলে বিএনপি পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ী হয় কীভাবে? আর সরকারে থাকতে এবং বিরোধী দলে থাকতেও বিএনপি যে সন্ত্রাস-নাশকতা, জঙ্গীবাদ ও জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার যে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা আবার কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চায়? ভোট পাওয়ার আশা করে? সন্ধ্যায় গণভবনে প্রবেশ করে প্রথমেই বিপুল ভোটে মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করেন এবং তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীও এ সময় ডাঃ আইভীকে কাছে টেনে নিয়ে দোয়া করেন এবং বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি। এ সময় সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মেয়র ডাঃ আইভী নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী তা দ্রুতই নির্মাণ করার আশ্বাস দেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়নের গতিধারা ব্যহত হয়, এটা নারায়ণগঞ্জবাসী বুঝেছেন। ডাঃ আইভী পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে, তার গৃহীত সকল উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত করতে পারবে এবং আরও উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে পারবে। উন্নয়নের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবে। আমরা সারা বাংলাদেশেরই উন্নয়ন করে যাচ্ছি। তাই আমার কাছে দাবি করতে হবে না, যা প্রয়োজন হবে অবশ্যই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে আমার একটাই নির্দেশ ছিল যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। যাতে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পেরেছে। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর আমার বিশ্বাস ছিল, ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারলে তারা নৌকাতেই ভোট দেবে। আর তাই নাসিক নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নারায়ণগঞ্জবাসী বিজয়ী করেছে। এজন্য সেখানকার সব ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিটি নির্বাচনে কারচুপি ও প্রহসনের উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির জন্মই হচ্ছে অবৈধভাবে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করাতে বাধ্য করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর জিয়ার আমলেই প্রথম প্রহসনের নির্বাচন শুরু হয়। হ্যাঁ-না ভোট, ৭৯ সালের কথিত রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে কারচুপির নমুনা দেশবাসী কখনও ভুলে যাবে না। আর খালেদা জিয়ার ক্ষমতার সময় মাগুরা, ঢাকা-১০, মিরপুরসহ সকল নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনে কারচুপির নমুনাও দেশবাসী ভুলবে না। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে ২-৩ ভাগও ভোট পড়েনি। ভোটচুরি ক্ষমতায় আসার কারণে দেশবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে মাত্র কয়েকদিনের মাথায় ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়েছিল। এই কথা অনেকে কীভাবে ভুলে যান? স্মৃতি থেকে কীভাবে হারিয়ে যায়, সেটাই আমার প্রশ্ন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুঃশাসন, নিপীড়ন নির্যাতন এবং টানা দু’বছরের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ও আগুন সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতার পাঁচ বছরে তারা হেন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। দেশজুড়ে অত্যাচার-নির্যাতন, গণধর্ষণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর দখল, হত্যাসহ নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। ক্ষমতায় থেকে দেশের অর্থসম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে বিএনপি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) দুই পুত্র বিদেশের আদালতে ধরা পড়েছে এবং প্রমাণ হয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা লুটে খেয়েছেন, দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করেছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, এতিমের টাকা মেরে খেয়ে খালেদা জিয়া এখন আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পান। যদি তাঁর সৎসাহস থাকত তবে আদালতে যেতে ভয় পেতেন না, প্রায় দুইশ’বারের মতো রিট করে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতেন না। তিনি বলেন, সরকারে থাকতেও দুঃশাসন চালিয়েছে, আবার বাইরে গিয়েও শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে যারা শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে না কেন? এদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করে নিজেদের উন্নতি করে, আর বিরোধী দলে থাকতে মানুষ খুন করে। তাই তাদের জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার কী অধিকার আছে? কোন মুখে মানুষের কাছে ভোট চায়? আর জনগণই এদের ভোট দেবে কেন? ক্ষমতার বাইরে থেকেই যেভাবে তারা মানুষ খুন করে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, ক্ষমতায় গেলে তারা যে আরও কী করবে, দেশের জনগণকে তা উপলব্ধি করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট বেশি পেলেও বিদেশীদের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আর ক্ষমতায় এসেই কুখ্যাত দুই যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী বানায়। যেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বিচারের রায়ও কার্যকর হয়েছে। এখন তারা (বিএনপি) জাতির সামনে মুখ দেখায় কীভাবে? আর যারা (বিএনপি-জামায়াত) এতো অপরাধ করেছে, তাদের জনগণ ভোট দেয় বা কীভাবে? এরা যতো মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, জনগণ ধরে ধরে তাদের পোড়ায় না, সেটাই বড় কথা। সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের যে প্রকৃত উন্নয়ন হয়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আজ বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, সারাদেশেরই আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আর সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে কি হয় তা বিএনপি-জামায়াত জোট তা প্রমাণ করেছে। ক্ষমতায় এসে আমাদের সকল উন্নয়ন কর্মকা- তারা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে আবার পেছনে নিয়ে গেছে। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশকে তারা আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করেছিল। তাই দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির স্বার্থেই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারায়ণগঞ্জের পুনর্নির্বাচিত মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী তার এই বিশাল বিজয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন, তার যোগ্য সম্মান দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। আমার এই বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তারও প্রমাণ হয়েছে। কোন একটি ঘটনাও সেখানে ঘটেনি। নৌকার এই বিজয়কে সারাদেশেই অব্যাহত রাখতে হবে এবং থাকবে।
×