ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইফতেখার আহমেদ টিপু

এক নম্বর সমস্যা যানজট!

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

এক নম্বর সমস্যা যানজট!

যানজট এখন শুধু রাজধানীবাসীর নয়, সমগ্র জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে- অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিঘিœত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরী ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মেগাসিটি অভিধাটি গর্বের অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হলেও যানজটসহ নানা সমস্যায় ঢাকা মহানগরী বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমস্যাবহুল নগরী হিসেবেও বদনাম কিনেছে। রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে লোকসান আর ভোগান্তির কোন সীমা-পরিসীমা নেই। ঠিক কতটা অর্থনৈতিক লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, কতটা কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, মানুষ কতটা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে এ নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। কিন্তু কোন কিছুতেই সফলতা আসছে না। ঢাকার যানজট নিয়ে এত দুশ্চিন্তার পরও এ থেকে পরিত্রাণের কোন পথ এখন পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বরং দিন দিন আরও সঙ্কুুচিত হয়ে আসছে যান চলাচলের রাস্তা। ঢাকার রাস্তায় মন্থর এবং দ্রুত গতির যান চলাচল করে অর্থাৎ রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, মোটরগাড়ি- যা পৃথিবীর কোথাও এ ব্যবস্থা নেই। এ কারণেই ভয়াবহ যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। যানজটে এখন নাকাল নগরবাসী। একটি শহরে রাস্তার পরিমাণ হওয়া উচিত ২৫ শতাংশ। অথচ ঢাকায় মোট রাস্তার পরিমাণ আয়তনের মাত্র ৮ শতাংশ। পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিলে ৮ ভাগ রাস্তা থাকার পরও ঢাকার যানজট নিরসন সম্ভব। ঢাকার চেয়ে কলকাতায় এক সময় যানজট ছিল বেশি। সেই কলকাতার যানজট এখন ঢাকার তুলনায় তুচ্ছ। আয়তনের তুলনায় লন্ডন-সিঙ্গাপুরেও রাস্তা কম। অথচ এ দুই নগরীতে দুঃসহ যানজট নেই। হংকংয়ের ৯০ শতাংশ লোক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। ঢাকায় যানজটের পেছনে প্রধান কারণ যথাযথ নগর পরিচালন ব্যবস্থা না থাকা। ঢাকায় বিভিন্ন সময় রাজউক, ডেসা, ওয়াসা, ডেসকো হয়েছে। এগুলোর কাজ আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই। এগুলোর যথাযথ সমন্বয় দরকার। সবই আলাদাভাবে গড়ে ওঠায় এবং সমন্বয়হীনভাবে কাজ করায় কোন লাভ হয়নি। যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনও দায়ী। দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন মানুষ আসে কাজের খোঁজে। ঢাকা পুরোপুরি অর্থনীতিনির্ভর শহর হয়ে গেছে। সরকারের যেসব পরিকল্পনা, তাতে এ অভিবাসন ঠেকানোর কোন উপায় নেই। অবকাঠামোর উন্নয়ন আর আইনের কথা যতই বলা হোক না কেন, সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। যে কোন পর্যায়েই যাওয়া হোক যানজট হবেই, যদি মানুষের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখা না যায়। এর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যে শহরে লোকসংখ্যা বেশি, সেখানে তিন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা দরকার। সারফেস, এলিভেটর ও আন্ডারগ্রাউন্ড। আমাদের এখানে শুধু সারফেসটাই আছে। এটা কোন বড় শহরের চরিত্র নয়। যানজট নিরসনে পাতাল রেলের কথাও ভাবতে হবে। তবে সবকিছু করতে হবে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই করে। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সরকারের আশু করণীয় হচ্ছেÑ ছোট ছোট মিনিবাস তুলে দিয়ে ৫২ সিটের বাস ও দোতলা বাস চালু করা। মূল সড়ক থেকে রিক্সা সম্পূর্ণরূপে তুলে দেয়া। ট্রাক ও ঠেলাগাড়ি কেবল রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেয়া। বর্ধিত ঢাকার সঙ্গে মূল ঢাকায় চলাচলের জন্য অধিকসংখ্যক বাইপাস সড়ক নির্মাণ। রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করা। ঢাকায় রাজপথ অপদখল পুরোপুরিভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর রাজপথ দখলমুক্ত হলে যানজট সহনীয় মাত্রায় আসবে। যানজট জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদনের জন্য যে সময় ব্যয় হওয়ার কথা তা গিলে খাচ্ছে এ সমস্যা। গত এক দশকে যানজটে অপচয় হওয়া সময় ব্যবহƒত হলে বাংলাদেশ বহু আগেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতো। ফলে এ সমস্যার সমাধানে আন্তরিক প্রয়াসই এখন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা তেমন কোন কাজে আসছে না। যানজট নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। বিচ্ছিন্নভাবে একক পদক্ষেপ নিয়ে এই সর্বগ্রাসী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সোনারগাঁও রোড, ঢাকা থেকে
×