ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৈয়বুর রহমান

সাদ্দামের প্রাসাদ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

সাদ্দামের প্রাসাদ

ইরাকের প্রয়াত সাদ্দাম হোসেন, নিঃসন্দেহে আধুনিক ইতিহাসের একটি বিতর্কিত চরিত্র। ইরাকে হামলা চালানোর অজুহাত হিসেবে ব্যাপক ধ্বংসের অস্ত্র তৈরি কিংবা সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পতনের পর সারা ইরাক খুঁজেও ওই ধরনের কোন অস্ত্র পওয়া যায়নি। এর বদলে পাওয়া গেছে প্রাসাদ। আসলে সাদ্দাম তার ২৪ বছরের শাসনামলে ৭০টিরও বেশি প্রাসাদ তৈরি করেছেন। এগুলোর একটি তৈরি করা হয় ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বসরায়। সেটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। সেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেশটির সব ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রতিদিন হাজার হাজার ইরাকী নিজেদের সমৃদ্ধ অতীত দেখতে আসে প্রাসাদে। বিশাল লোহার ফটক ঠেলে ঢুকতে হয় জাদুঘরটিতে। অতীতের নিদর্শনগুলোকে চুরির হাত থেকে রক্ষার জন্য লোহার ফটকটি স্থাপন করা হয়। সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুর পর তার বসরার প্রাসাদে কি স্থাপন করা হবে, তা নিয়ে হয় বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। শেষমেশ ব্রিটিশ সৈন্যদের মাথা থেকে বের হয় জাদুঘরে রূপান্তরের পরিকল্পনা। প্রাসাদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে একটি গ্যালারি খুলে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধের সময় প্রাসাদটির বিদ্যুত সরবরাহ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। পাইপলাইন ভেঙ্গে পড়ে পুরোপুরি। ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাপকভাবে। প্রাসাদের সম্মুখভাগ একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তাই ভবন মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। গত তিন বছর ধরে ভবনের মেরামত ও নতুন করে সাজানোর কাজ দেখভাল করছেন ২৭ বছর বয়সী মহুদি আলুসাউই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেনের মালিকানাধীন প্রাসাদটি আগের মতো করে সাজানোর দায়িত্ব নেয়ার আগে প্রথমেই আমার সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে।’ ভবনটি নির্মাণ করা হয় নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক ওই সময় ইরাকে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ চলছিল। তিনি বলেন, ‘প্রথম যেদিন আমি প্রাসাদটি দেখি সেদিনই অনুধাবন করতে পারি যে, শুধু ইট দিয়ে প্রাসাদটি তৈরি করা হয়নি, বরং এর সঙ্গে মিশে আছে বহু ইরাকীর রক্ত। কাজ শুরুর প্রথম দিন আবেগ ধরে রাখতে পারিনি, আমি কেঁদে ফেলি।’ সম্মুখ দিকে ব্যালকনিটি মেরামত করতে গিয়ে সব চেয়ে বেশি গর্ব অনুভব করেন আলুসাউই। তিনি এটি মেরামত করেন আসল নকশা অনুযায়ী। ‘এটি সহজ ছিল না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটিই ছিল প্রকৃত ও আসল চ্যালেঞ্জ। সাদ্দামের শাসনামলে বেশিরভাগ ইরাকী জানত না, প্রাসাদের দেয়ালের আড়ালে কী হচ্ছে। তবে সবাই জানত, ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং এইচডব্লিউএইচ কোম্পানি প্রাসাদের নির্মাণকাজ তদারক করছেন। আর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন ডুরে তৌফিক। সেদিনের সময়গুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘তাকে বলা হয়, প্রতিদিনই প্রাসাদে সাদ্দাম হোসেনের জন্য তিনবেলা খাবার রান্না করা হতো। কিন্তু তিনি কখনোই আসেননি। একে তিনি নিদারুণ অপচয় বলে অভিহিত করেন।’ ‘আমরা যখন প্রথম এখানে আসি তখন দেয়ালের চারদিকে ও কাঠের তৈরি শিল্পকর্মের সবখানে প্রায় লেখা ছিল সাদ্দাম হোসেনের নাম। প্রধানমন্ত্রী সব নাম মুছে ফেলতে বললেন। আমরা দেয়ালগুলোই ধ্বংস করে ফেললাম,’ বললেন আলুসাউই। এখানে থেমে না থেকে বলেই চলেন তিনি, ‘কিন্তু এখন আমি অনুধাবন করত পারছি যে, অথচ এগুলোই হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের অংশ।’ বসরার আগের জাদুঘর লুট হয়ে যায় ১৯৯১ সালে। সেই সময় জাদুঘরের অর্ধেক নিদর্শন চুরি হয়। জাদুঘরের পরিচালককেও গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু এখন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছেন জাদুঘরের বর্তমান পরিচালক কাহতান আল ওবায়েদ। এরই মধ্যে বাগদাদ থেকে এনেছেন শতাধিক নিদর্শন। এ ব্যাপারে সহায়তা করছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ও ব্রিটিশ জাদুঘর। ওবায়েদ বলেন, এখানকার অনেক নিদর্শন সাদ্দামের সময়ে তৈরি, অনেক নিদর্শনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যথা-বেদনা। কিন্তু কে জিতবে সাদ্দাম না সভ্যতা? সভ্যতা সব সময় জেতে।
×