ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নবিত্ত সংসার মাতৃতান্ত্রিক হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১৬ জুলাই ২০১৬

নিম্নবিত্ত সংসার মাতৃতান্ত্রিক হয়ে উঠছে

আমরা নিম্ন আয়ের লোকদের সম্পর্কে কথা বলতে গেলেই কর্মক্ষেত্রে তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলি। কিন্তু তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দিকে আলোকপাত করার কথা বিবেচনায়ও আনছি না। এই শ্রেণীর একটি বড় অংশ এখন শিক্ষিত হচ্ছে। অথচ নিম্ন আয়ের এসব মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার কারণে আরও নিম্নগামী হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী-নির্যাতন এদের প্রতিনিয়ত সমস্যা। ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলে বের হয়ে আসে যে তথ্য তাতে আমরা বুঝি যে এসব পরিবারের প্রকৃত উপার্জনকারী ব্যক্তি কোন পুরুষ নয় বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলা। কৃষি জমির বা বর্গা চাষের অধিকারী পুরুষদের বেশিরভাগই অল্প সময় পরিশ্রম করেন। উপার্জনকারী ব্যক্তিরা জুয়া ও অন্যান্য বদঅভ্যাসে আসক্ত ও একের অধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সংসারের মৌলিক খরচ যোগানোর দায়িত্ব থাকে তাদের স্ত্রীদের ও ছোট শিশুদের ওপর। এদের স্ত্রী হাতের কাজ, বেতের সামগ্রী তৈরি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বা বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার ও সন্তানের খরচ সামলান। স্ত্রীদের মধ্যে কিছু শহরে গিয়েও গৃহকর্মী, মাটি কাটার কাজ করেন ও মেয়ে শিশুকে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করিয়ে সংসারের খরচ সামলান। সন্তানদের শহরে সরকারী বিদ্যালয় বা কারিগরি বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে খরচ যোগান এসব মায়েরা। ঋণ করে রিক্সা কিনে দেন স্বামীকে। এরা স্ত্রীর রোজগারও জোরপূর্বক নিয়ে যায় ও পুরো অর্থ নিঃশেষ করে ফিরে আসে। এদের ছেলে সন্তানরা প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার, সিএনজি চালক বা অনেক সময় রাজমিস্ত্রী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী ইত্যাদি কাজে যোগ দিয়ে একটি মধ্যম মানের উপার্জন শুরু করে। অনেকের ছেলে সন্তান আবার নেশার পাল্লায় পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। মেয়ে শিশুটি যুবতী বা কিশোরী হলে সে গার্মেন্টস কর্মী বা গৃহকর্মী যা-ই হোক সেখান থেকে গ্রামে নিয়ে তাকে যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয়। সেই যৌতুকের ঋণ পরিশোধ করতে হয় স্ত্রীদের অমানুষিক পরিশ্রম করে। দেখা যায় এরা এক সঙ্গে ১০/১২টি বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ নিয়ে নেন। স্বামীর এই বহুবিবাহের স্বভাব ও সংসার কাজ নির্বাহে দায়িত্বহীন আচরণ দেখে মনে হয় এই একটি সামাজিক শ্রেণী অদৃশ্য শৃঙ্খলায় মাতৃতান্ত্রিক পরিবার হয়ে পড়েছে। সন্তানকে মানুষ করা, শিক্ষাদান, বিবাহ ও সংসারের ব্যয় নির্বাহের ভূমিকায় যিনি, তিনি একজন নারী ও একজন মা, বেশিরভাগ আবার স্বামী পরিত্যক্তাও বটে! এরা অসম্ভব নিষ্ঠায় পরিবার প্রথাটাকে এক তরফাভাবে ধরে রেখেছেন। এমনও ঘটনা আছে কোন এক এই রকম শ্রমজীবী মহিলার স্বামী যিনি অন্য মহিলার সঙ্গে সংসার করছেন, তার কিশোর ছেলেটি হঠাৎ বিয়ে করে ফেলায় তিনি তার স্ত্রীকে বেদম প্রহার করছেন এবং তার ছেলেকে ত্যাজ্য করার ভয় দেখাচ্ছেন। আরেকজন মহিলা কাজের বাড়ি থেকে ঋণ করে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করার পয়সা পাঠালে তার দায়িত্বহীন স্বামী সেটা তার ব্যক্তিগত কাজে খরচ করে ফেলেছেন। এমন ঘটনাও ঘটছে স্বামী ১৬ বছর যাবত পাগল তার খরচ যোগাচ্ছেন স্ত্রী শহরে থেকে উপার্জন করে এবং গ্রামে খরচ পাঠিয়ে। এইসব নামমাত্র স্বামীর ভূমিকায় যারা রয়েছেন তাদের শোধরানোর আবশ্যকতা রয়েছে। নয়তো যত সুবিধাই বৃদ্ধি করা হোক না কেন আদতে এসব নারী সুবিধাবঞ্চিত রয়েই যাবেন। কে নেবে এসব তথাকথিত শোষক পুুরুষদের সংশোধনের ব্যবস্থা? জিনাত ফয়সাল মহানগর প্রজেক্ট, ঢাকা
×