ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার দুই শত্রু - স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৯ জুন ২০১৬

শেখ হাসিনার দুই শত্রু - স্বদেশ রায়

দেশে এ মুহূর্তে বেশ কিছু টার্গেট কিলিং হচ্ছে। কেন এ টার্গেট কিলিং এ নিয়ে এই কলামে বহুবার লিখেছি। পুনরাবৃত্তির দরকার নেই। তবে জামায়াত-বিএনপি এই যে বিভিন্ন নামে টার্গেট কিলিং করছে, এ কাজের ভেতর দিয়ে তারা শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। বরং শেখ হাসিনা আমেরিকাসহ অন্যান্য জঙ্গীবিরোধী দেশের সমর্থন আরও বেশি পাবেন। তাদের কাছ থেকে লজিস্টিক সাপোর্টও পাবেন। শেষ অবধি তিনি যেমন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছেন; এখানেও সফল হবেন। জামায়াত অফিস বন্ধ এবং বিএনপির গুলশান অফিস কার্যত অকেজো হয়ে পড়ার পরে জামায়াত-বিএনপি জাতীয় প্রেসক্লাবকে তাদের আরেকটি অফিসে পরিণত করেছিলো। সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে যখন আজীবন সম্মাননা পাওয়ার কথা সেই বয়সে শফিকুর রহমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রেসক্লাবকে জামায়াত-বিএনপি অফিস থেকে আবার কিছুটা হলেও প্রেসক্লাবে পরিণত করেছেন। তবে সম্প্রতি প্রেসক্লাবের কাছাকাছি একটি ভবনে এক বিশেষ ব্যক্তিকে ঘিরে আরেকটি জামায়াত-বিএনপি অফিস হয়েছে। বিএনপি যে কথাগুলো বলতে পারছে না, যে কাজগুলো করতে পারছে না ওই ব্যক্তি সেটাই করছেন। তার সঙ্গে শেখ হাসিনার চিরশত্রু ড. সাহেব আছেন, এমনকি বিপথগামী কিছু মাইনরিটি নেতা গিয়ে সেখানে ভিড়েছেন। তবে এ শত্রুরাও শেখ হাসিনার জন্য বড় শত্রু নয়; এগুলোও এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা চিমটি দিয়ে উঠিয়ে ফেলে দেবেন। তখন এই চামচিকারা বুঝবেন তারা আসলে বাদুড় নন, চামচিকা মাত্র। অবশ্য অত্যন্ত ভদ্রভাবে এদের সম্পর্কে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক চমৎকার বলেছেন একটি টেলিভিশনে। তিনি বক্তব্য হিসেবে শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের রথযাত্রার লাইন উল্লেখ করেন- রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি... মনে হয় এ চামচিকাদের সম্পর্কে এর থেকে আর বেশি কিছু বলার নেই। তাছাড়া শেখ হাসিনা এগুলো আমলে নিয়েছেন। তিনি যে আমলে নিয়েছেন তার প্রমাণ তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি বলেছেন, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এসব হত্যাকা-ে জড়িত। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বলতে যে পাকিস্তানের আইএসআইÑ এ নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। আর ওই টার্গেট কিলিং থেকে প্রেসক্লাবের কাছাকাছি ভবনে জড়ো হওয়া ব্যক্তিরা সবই আইএসআই-এর চর। তাই শত্রুরা যেখানে চোখের সামনে, তাদের পেছনে কারা তাও উন্মুক্ত। এদের মোকাবেলা করা খুব অসম্ভব কিছু নয়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা সেটা করবেন। জনগণও শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন। কারণ, শেখ হাসিনা তাদের ভাল রেখেছেন, তাদের জন্য উন্নয়ন করছেন- যে উন্নয়ন আগে কখনও হয়নি। আর কোন নেতার সঙ্গে যদি দেশের জনগণ থাকে তাহলে ওই নেতাকে কোন কিছু দিয়ে পরাস্ত করা যায় না। বরং পাহাড়ের গায়ে ঢিল মারলে যেমন ঢিলটি গুঁড়ো হয়ে যায় এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে তাদেরও দশা বেহাল হবে। ২০১৩তে চরম নৈরাজ্য করেও এই শক্তি শেখ হাসিনার কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কারণ, শান্তিতে থাকা জনগণ কেউই খালেদা বা তার মেন্টর জামায়াতের কথায় রাস্তায় নেমে আসেনি। কারণ, জনগণ ভাল ছিল। দেশের জনগণের ভাল থাকার জন্য কিন্তু খুব বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না। জনগণ যদি তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তাদের কেনার সাধ্যের মধ্যে পায়, আর যদি শান্তিতে ঘুমাতে পারেÑ তাহলে তাদের চাহিদার আশি ভাগ মিটে যায়। শেখ হাসিনার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধি সরকারের সব থেকে বড় সাফল্য কিন্তু নিত্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা। চাল, ডাল, পেঁয়াজ এমন কতক পণ্যের দাম তো কখনই বাড়তে দেননি শেখ হাসিনা। অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়েকবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ভেতর শেখ হাসিনা তা নামিয়ে নিয়ে আসেন। ১৯৯৬-২০০১ সালের পাঁচ বছর আমি আমার এক সাংবাদিককে দিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক বাজার দরের চার্ট ছাপানোর ব্যবস্থা করি। পাঁচ বছর প্রায় একই দাম ধরে রাখে তৎকালীন সরকার। ২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধিও কিন্তু প্রায় একই অবস্থা। বরং একই অবস্থা বললে কিছু ক্ষেত্রে কম হবে। জামায়াত-বিএনপি আমলে ও মিলিটারি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক আমলে কোন কোন নিত্য পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেগুলো নামিয়ে আনতে সমর্থ হন। শেখ হাসিনা নিজেই বর্তমানে বাজারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন এ মুহূর্তে কিন্তু সে অবস্থা নেই। বাজার কিছুটা হলেও হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে দেশে ২শ’ টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকতেও প্রায় এক সপ্তাহ পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা অন্তত কয়েক শ’ কোটি টাকা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ডাকাতি করেছেন। ওই সময়ে প্রায় চারদিন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন সিঙ্গাপুরে। তাই ব্যবস্থা নিতেও দেরি হয়। এ মুহূর্তেও খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে তার পরেও সেগুলো বাজারে না ছেড়ে মজুদ রেখে বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি যে সব দেশ থেকে এ পণ্যগুলো প্রয়োজনে আমদানি করা হয়, সেখানে পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এখান থেকে এত কম দামে কিনে নিয়ে বাংলাদেশে কেন এত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই মৃতপ্রায় জামায়াত ও বিএনপির থেকে শেখ হাসিনার অনেক বড় একটি শত্রু এ মুহূর্তে এই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। শেখ হাসিনাকে যে কোন মূল্যে এই অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে এ বাজারকে বের করে আনতে হবে। তার জন্য যত কঠোর হওয়া প্রয়োজন হয় সেটা তাকে হতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনে যে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেও দেশের সাধারণ মানুষ খুশি হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের টাকা আছে। তাদের রক্ষাকর্তা আছে। কিন্তু তারা কেউই জনগণ ও শেখ হাসিনার থেকে বেশি শক্তি রাখেন না। তাই তাদের ও তাদের গডফাদারদের দমন করতেই হবে। সে দমন করতে গিয়ে যদি দলের কিছু নেতার ওপর খড়্গ পড়ে সে খড়্গ কৃপাণ শেখ হাসিনাকে কঠোর কঠিন মুখে ব্যবহার করতে হবে। কারণ, রাজশক্তি বজ্র সুকঠিন। এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত কিছু বিদেশী পণ্য কেনে, সেগুলোরও দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এই পণ্য মূল্যগুলো বাড়ার সঙ্গে ডলারের মূল্যের সংযোগ আছে। রফতানি ঠিক রেখে, রেমিটেন্স ঠিক রেখে, ডলারের মূল্য এডজাস্ট করে ও আমদানি শুল্ক নিয়ে চিন্তা করে, এই বিদেশী পণ্যগুলো মধ্যবিত্তের নাগালে রাখা যায় কীভাবে সে বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়েÑ সঠিক বিবেচনার ভেতর দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এই বাজারদর শত্রুটি কিন্তু অনেক বড় শত্রু। এ যদি বড় বৃক্ষে পরিণত হয় তখন তাকে উপড়ে ফেলা কষ্ট বরং এর ভারেই বড় মাপের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পরে দুই নম্বর শত্রু হচ্ছে শেখ হাসিনার ছিঁচকে নেতারা। ঢাকাসহ নানা জায়গা থেকে বর্তমানে এদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসে প্রমাণসহ। শিবাজী যেমন ইঁদুরের মতো মুঘল সাম্রাজ্যকে ফোকলা করে দিয়েছিল। এরাও কিন্তু তেমনি একটি সরকারকে ফোকলা করার জন্য যথেষ্ট। গত ২০০৯ থেকে ’১৩ অবধি এরা ছিল। তবে তখন কিছুটা কম ছিল। কারণ তখন বিরোধী দল ছিল, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ছিল। এখন ওই অর্থে কোন বিরোধী দল নেই। তাই এই ছিঁচকে নেতাদের কর্মকা- এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আর এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা দরকার সাধারণ মানুষ কিন্তু ইঁদুরের মতো- সে সিংহকে দেখতে পায় না সে ভয় পায় তার সামনের বিড়ালের থাবাকে। আওয়ামী লীগের এই ছিঁচকে নেতাদের থাবাই ইঁদুরের ওপর ওই বিড়ালের থাবা। এদের একটি থাবাই একটি গ্রাম বা একটি মহল্লায় শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। এই বিড়ালদের দৌরাত্ম্য যে দিন দিন বাড়ছে তার প্রমাণ প্রতি মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে। যেমন গত কয়েক দিনে অসহায় কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থকের কিছু চিঠি এসেছে আমার কাছে। গত এক বছরে এ ধরনের প্রচুর চিঠি পেয়েছি। তার একটি চিঠির কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করছি, ‘গ্রামাঞ্চলে যে ছিঁচকে নেতারা রয়েছে তাদের দৌরাত্ম্যে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সরকারের ওপর মহল থেকে এই নেতাদের দমন করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদেরই চরম ফল ভোগ করতে হচ্ছে। গ্রামের তৃণমূল নেতারা কে কার আগে সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার বদলে ক্ষুণœœ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।’ শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদ, তিনি আমাদের থেকে হাজার গুণ তঁাঁর সংগঠন ভাল বোঝেন। তিনি জানেন কিভাবে তিনি তাঁর এই শত্রুকে উপড়ে ফেলবেন। হয়ত তিনি পারবেন। সে সক্ষমতা হয়ত তাঁর আছে। কিন্তু রাজনীতির গ্রামার বলে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তুললে এই সমস্যার সমাধান সহজ হয়। কিন্তু সে কাজ শেখ হাসিনা কীভাবে করবেন! কারণ তার অনেক সর্ষের ভেতর ভূত। অনেক ক্ষেত্রে টাকা পয়সার বিনিময়ে থানা সম্মেলন ও জেলা সম্মেলনে নেতা তৈরি করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নমিনেশন পেয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। আর এসব ঘটে গেছে শেখ হাসিনার অগোচরে। তাই এই ভূত তাড়িয়ে তিনি কীভাবে তাঁর দুই নম্বর এই শত্রু দমন করবেন তা তিনি ভাল জানেন। তবে অসম্ভবকে সম্ভব করার নেত্রী তিনি। বাংলাদেশে তিনি সে কাজ করেছেন। খালেদাকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করা থেকে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি; যা ছিলো এ দেশে অলীক স্বপ্ন। সে অলীক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তিনি। তাই তাঁর এই দুই শত্রুকে তিনি যে দমন করতে পারবেন না এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। শুধু বলা যেতে পারে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। শুরুতেই এই দুই শত্রুর শিকড় উপড়াতে হবে। [email protected]
×