সংসদ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বাজেট বাস্তবায়নে একটি ‘আর্থিক (ফিসকাল) কমিশন’ এবং ব্যাংকিং খাতে দুর্যোগ ও চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে ‘ব্যাংকিং কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে সম্পূরক বাজেটের আগে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটিতে অনুমোদন নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে গঠিত সরকারকে সহযোগিতা করবে এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। তিনি বলেন, সম্পূরক বাজেটে জাতীয় আয়ের একভাগ কম বিনিয়োগ হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর যে খতিয়ান দেখানো হয়েছে তাতে জাতীয় আয়ের শতকরা বিনিয়োগ ২৯ দশমিক ৮ ভাগ। যা সঞ্চয়ের চাইতে একভাগ কম। এই টাকা গেল কোথায়? এর হিসাব নেয়া প্রয়োজন। আমার ধারণা এই টাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাচার হয়েছে। এর হিসাব থাকা দরকার। আর রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের লোকসান মেটানোর জন্য বরাদ্দ দেয়া যায় না। আর শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, আমাদের পুঁজিবাজারের দিকেও নজর দিতে হবে।
ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী ও জাতীয় পার্টির নুুরুল ইসলাম মিলন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে আমাদের রফতানিকারকরা তাদের রফতানি আয়ের এক-তৃতীয়াংশ তারা বিদেশে রাখতে পারবে। এর যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাই না। এর পরিবর্তন দরকার। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ৪০ ভাগ আনার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, তা না হলে বাজেটের যৌক্তিকতা থাকবে না।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের আয়ের উৎসগুলো যথাযথোভাবে পরীবিক্ষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে একটি ফিসকাল কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই ফিসকাল কমিশন কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের উৎসগুলো বিশ্লেষণ করে কোন খাতে কিভাবে আয় করবে সে বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বের কারণে অর্থনীতির পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বছরে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় সাফল্য হচ্ছে পদ্মা সেতুতে নিজস্ব অর্থায়ন। এটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এটা আমাদের বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বিশ্বাস করেনি, এমনকি আমরাও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তিনি বলেন, আমাদের বাজেট পেশ করার সময় যে সম্পূরক বাজেট দেয়া হয়, সেটিতে যা ঘটার আগেই ঘটে। আমাদের কাছে শুধু সংশোধনী আসে, এতে কিছু করার থাকে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ৯ মাসে ৩০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে, তাহলে বাকি দুই মাসে কীভাবে সফল হবে? এর জন্য আগামী অর্থবছরে শুরু থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হবে। তিনি বলেন, বাজেট পরিবর্তন পরিমার্জনের এখতিয়ার সংসদের। কিন্তু ৩৮টি মন্ত্রণালয় সংসদের অনুমোদন না নিয়ে আগে খরচ করে ফেলেছে। তাই সম্পূরক বাজেট অনুমোদনের আগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো উচিত।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে যেখানে যে অর্থের প্রয়োজন তা দিতে পেরেছে। সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনার এটিই বড় প্রমাণ। সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন, যা গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখছে।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ বছরের নিরীক্ষা আপত্তির পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা। সেবাখাতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকে না। রাষ্ট্রের আর্থিক বিভাগ চৌর্যবৃত্তিতে ভরে গেছে।