ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৯ মে ২০১৬

পায়রা সমুদ্রবন্দর

চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সেই লক্ষ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর খনন করার জন্য বেলজিয়ামের কোম্পানি ‘জান ডি নুলে’র সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বন্দরে এখন ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে ১৪ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো সম্ভব হবে। এতে দীর্ঘ ও বেশি গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দরের জেটিতে আসতে পারবে। চুক্তির ভিত্তিতে বন্দরের মূল চ্যানেল ড্রেজিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে কোম্পানিটি। বন্দরটি ২০১৮ সালের মধ্যে পুরোদমে চালু হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে বন্দরটিকে ঘিরে গড়ে উঠছে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রও। নতুনভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। সমুদ্রবন্দর ঘিরে তৈরি হবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালীর চার লেনবিশিষ্ট সড়ক যোগাযোগও গড়ে উঠছে। বন্দরটি পুরোদমে চালু হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশে প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল রয়েছে। এই সুদীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছে অসংখ্য চ্যানেল। চ্যানেলগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ বলা যায়। পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ৯৫ শতাংশ সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে সিংহভাগই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে। এতে সহজেই বোঝা যায়, দুটি বন্দরের ওপর কি পরিমাণ চাপ ও নির্ভরশীলতা রয়েছে। নানা কারণে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সম্প্রসারণ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পায়রা সমুদ্রবন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে কাজ শুরু করলে এসব বন্দরের ওপর চাপ কমে যাবে বহুলাংশে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানিকরণ সহজ হবে। শিল্প-কল-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান। এতে এখানকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটতে পারে। এই সমুদ্রবন্দরের পাশেই ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নৌঘাঁটি রয়েছে। রয়েছে নৌ কমান্ড, এ্যাভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বাথিং সুবিধা। ফলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং দুর্যোগকালে এই এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। রাজধানী ঢাকা থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলের দূরত্ব প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার। এই ক্ষেত্রে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে পায়রা সমুদ্রবন্দর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই শুধু পায়রা সমুদ্রবন্দরই নয়, এই অঞ্চলের পাথরঘাটায় আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি-রফতানিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হচ্ছে। কোন দেশের বন্দর, সেটা স্থল, সমুদ্র বা বিমান যাই হোক- তা সেই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সমুদ্রবন্দরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই খাতে আরও সুবিধাদি বাড়ানো জরুরী। এই বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক স্বপ্ন। তাই বন্দর সংক্রান্ত পরিকল্পনার যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।
×