ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো চলবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত

পোশাক শিল্পে শক্ত জায়গা করে নিচ্ছে ডেনিম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

পোশাক শিল্পে শক্ত জায়গা করে নিচ্ছে ডেনিম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ববাজারে ভাল চাহিদা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে একটি শক্ত জায়গা করে নিয়েছে ডেনিম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় ডেনিম প্রোডাক্ট রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে বছরে ডেনিমের বাজার প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জোগান দেয়া হয় ৩৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য। বিশ্বে বাংলাদেশের ডেনিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে হারে উৎপাদন হচ্ছে না বলে এ খাতে রফতানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা, ডেনিম জিন্স উৎপাদনে উদ্যোক্তারা এখন বিনিয়োগ করছেন। বর্তমানে দেশে ২৬টি ডেনিম কারখানা রয়েছে। আরও ১৭টি কারখানা তৈরি হচ্ছে। যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ খাত থেকে ৭০০ কোটি ডলারের রফতানি আয় সম্ভব। এই অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। ঢাকায় সোমবার শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ডেনিম এক্সপোতে অংশ নেয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জনকণ্ঠকে এসব কথা জানালেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো চলবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই এক্সপো হচ্ছে। সোমবার এই এক্সপোর উদ্বোধন করা হয়। এতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, র্জামানি, ইতালী, জাপান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, তুরস্ক এবং ভিয়েতনামের মোট ৪৯টি এক্সিবিটর তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। ডেনিম এক্সপো আয়োজন করেছে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড। আয়োজকরা জানান, এই এক্সপোতে একই স্থানে ডেনিম ভ্যালু চেইনের সব ধরনের ডেনিম এক্সিবিটরের অংশগ্রহণে ক্রেতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। প্রদর্শনীতে এক্সিবিটররা নতুন ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রদর্শনীতে ‘ডেনিম ট্রেন্ডস ২০১৭’, ‘বাংলাদেশ হরিজোন ২০২১’ এবং ‘নোস্টন এ্যান্ড ওয়াটারব্রাশ’ শীর্ষক ৩টি সেমিনার এবং দ্য রেভুলেশন অব ডেনিম ইন্ডাস্ট্রির ওপর একটি দলগত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ডেনিম বা জিন্স ফেব্রিক্স ও গার্মেন্ট তৈরিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে আরও বেশি কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল ডেনিম কমিউনিটির সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি, বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে নতুন নতুন ডেনিম প্রোডাক্ট তৈরিতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহী ও পারদর্শী করে তোলাই হচ্ছে এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এই এক্সপো আন্তর্জাতিক ডেনিম বর্ষপঞ্জিতে একটি আকাক্সিক্ষত প্রদর্শনী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ গ্রিন এ্যাপারেল এ্যান্ড টেক্সটাইল এক্সপো আয়োজনের ঘোষণা দেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। দেশী-বিদেশী ক্রেতারা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এক্সপোতে অংশগ্রহণ করছেন। এক্সপোতে অংশ নেয়া বাংলাদেশী উদ্যোক্তা কামাল উদ্দিন বলেন, ডেনিমের বাজার ধরতে বর্তমানে বড় সমস্যা অবকাঠামোগত দুর্বলতা। সঙ্গে দক্ষ কারিগরও নেই। এছাড়া মাঝারি মানের একটি ডেনিম কারখানা করতে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এত টাকাও একজন উদ্যোক্তার পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। ব্যাংকঋণও পর্যাপ্ত নয়। ঋণ পেলেও সুদের হার অনেক বেশি, যা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টেকা কঠিন। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কট তো আছেই। এসব কারণে দেশে ডেনিমের কারখানা হচ্ছে কম। ফলে চাহিদা থাকার পরও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে না। ওই বাজার দখলে নিচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনাম। বেনজি টেক্সটাইলের কর্ণধার আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ডেনিম কারখানা তৈরিতে নতুন উদ্যোক্তারা অনেক বেশি আগ্রহী। তবে কারিগরি অদক্ষতার কারণে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। ওয়াশিং ইফেক্টের মাধ্যমে কাপড়ে বিশেষ গুণ সংযোজন থেকে শুরু করে নক্সায়, বৈচিত্র্যতা সবক্ষেত্রেই রয়েছে ঘাটতি। এ ঘাটতি পূরণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশী লোকবলের ওপর। আর এ কারণে রফতানিতে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। ডেনিম খাতকে এগিয়ে নিতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। উদ্যেক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ডেনিম কাপড় তৈরির জন্য দেশে ২৬টির বেশি কারখানা তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪০০ পোশাক কারখানায় ডেনিম থেকে পোশাক তৈরির মাধ্যমে রফতানি করে। এ খাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেছেন ৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
×