ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি

উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত চাকুরেরাও নতুন স্কেলে বেতন পাবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত চাকুরেরাও নতুন  স্কেলে বেতন পাবেন

এম শাহজাহান ॥ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারী চাকরিজীবীদের মতোই তাঁরা বেতন পাবেন। এতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের (২০১৫) জুলাই থেকে তাদের এ বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। তবে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা দেয়া হবে চলতি বছরের জুলাই থেকে। বর্ধিত এই বেতন রাজস্ব বাজেটের আওতায় গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত জনবলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসের আগে শুরু প্রকল্পে স্কেলভিত্তিক নিয়োজিত জনবল এ বেতন কাঠামো ভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাজেটের আওতায় নেয়া কর্মসূচী এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকর্মীরাও এ বেতন কাঠামোর আওতায় আসবেন। বেতন বৃদ্ধির কারণে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ব্যয়ের সংস্থান করতে হবে বিদ্যমান প্রকল্প ও কর্মসূচীতে রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে। এছাড়া অনুমোদিত প্রকল্পের মূলধন খাতে বরাদ্দ থেকে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না। তবে রাজস্ব খাতের বেতন-ভাতা উপখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকলে রাজস্ব খাতের অন্যান্য উপখাতগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানের বিধান রাখা হয়েছে। জানা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বর্তমান প্রকল্পের সংখ্যা ৯৯৮। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৫৪, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৩২, জাপান ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে অর্থায়িত প্রকল্প ১২। এছাড়া চলতি বাজেটের বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের সংখ্যা ৮৫৭। এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৩৬৮। এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ৪০ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। পরিপত্র জারি হওয়ায় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নতুন পে-স্কেলের আওতায় বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলেও তাদেরকে এর বাইরে রাখা হয়েছিল। জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থান ভেদে ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা কম-বেশি রয়েছে। তাদের জন্য তিনটি আলাদা বেতন কাঠামো করা হয়েছে। পৃথক তিনটি বেতন কাঠামোর মূল বেতনের হার একই এবং অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের আলোকেই থাকছে। পৃথক বেতন কাঠামোর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য একটি করা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য একটি এবং অন্যান্য স্থানের জন্য একটি বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ॥ ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ গ্রেড এবং বেতনের আকার একই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রেড-এক এ সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা ধরা হয়। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া এবং অন্য সুবিধাসহ মোট বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেড-দুই এ ৬৬ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ ১ লাখ ৫০০ টাকা। গ্রেড-তিন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ বেতন ৮৬ হাজার ২৫০ টাকা। গ্রেড-চার ৫০ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেড-পাঁচ ৪৩ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ ৬৬ হাজার টাকা। গ্রেড-ছয় ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ ৫৬ হাজার ৫২৫ টাকা। গ্রেড-সাত ২৯ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ ৪৬ হাজার ৪৫০ টাকা। গ্রেড-আট ২৩ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ ৩৭ হাজার ১৫০ টাকা। গ্রেড-নয় ২২ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা। গ্রেড-দশ ১৬ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ বেতন ২৭ হাজার ১০০ টাকা। গ্রেড-এগারো ১২ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে বেতন হবে ২১ হাজার ৭০০ টাকা। গ্রেড-বারো ১১ হাজার ৩০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে ১৯ হাজার ৭৮০ টাকা। গ্রেড-তেরো ১১ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে বেতন ১৯ হাজার ৩০০ টাকা। গ্রেড-চৌদ্দ ১০ হাজার ২০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। গ্রেড-পনেরো ৯ হাজার ৭০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধা মিলে ১৭ হাজার ৭০৫ টাকা। গ্রেড-ষোলো ৯ হাজার ৩০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ বেতন হবে ১৭ হাজার ৪৫ টাকা। গ্রেড-সতেরো ৯ হাজার টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ বেতন ১৬ হাজার ৫৫০ টাকা। গ্রেড-আঠারো ৮ হাজার ৮০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ বেতন দাঁড়াবে ১৬ হাজার ২২০ টাকা। গ্রেড-উনিশ ৮ হাজার ৫০০ টাকার সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা মিলে দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৮০০ টাকা এবং গ্রেড-বিশ ৮ হাজার ২৫০ টাকা, এর সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা মিলে দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৫৫০ টাকা। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য ॥ এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন ২০টি গ্রেড নতুন বেতন কাঠামোর সমান হবে। গ্রেড এক-এ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও টিফিন ভাতা মিলে সর্বসাকল্যে বেতন হবে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ টাকা। গ্রেড-দুই সর্বসাকল্যে বেতন ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা, গ্রেড-তিন সর্বসাকল্য ৮০ হাজার ৬০০ টাকা, গ্রেড-চার ৭১ হাজার ৫০০, টাকা, গ্রেড-পাঁচ ৬১ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-ছয় ৫২ হাজার ৯৭৫ টাকা, গ্রেড-সাত ৪৩ হাজার ৫৫০ টাকা, গ্রেড-আট ৩৪ হাজার ৮৫০ টাকা, গ্রেড-নয় ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা, গ্রেড দশ-২৫ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-এগারো ২০ হাজার ৪৫০ টাকা, গ্রেড-বারো ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা, গ্রেড-তেরো ১৮ হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-চৌদ্দ ১৭ হাজার ৩০০ টাকা, গ্রেড-পনেরো ১৬ হাজার ৭৩৫ টাকা, গ্রেড-ষোলো ১৬ হাজার ১১৫ টাকা, গ্রেড-সতেরো ১৫ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-আঠারো ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-উনিশ ১৫ হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-বিশ ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানের জন্য যা হবে ॥ ২০ গ্রেডে মূল বেতনের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। তবে অন্যান্য সুবিধা ও ভাতা কিছুটা পরিবর্তন হবে। মূল বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা মিলে সর্বসাকল্যে গ্রেড-এক এর বেতন দাঁড়াবে ১ লাখ ৬ হাজার ৮০০ টাকা। একইভাবে গ্রেড-দুই বেতন ৯০ হাজার ৬০০ টাকা, গ্রেড-তিন ৭৭ হাজার ৭৭৫ টাকা, গ্রেড-চার বেতন ৬৯ হাজার টাকা, গ্রেড-পাঁচ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা, গ্রেড-ছয় ৫১ হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-সাত ৪২ হাজার ১০০ টাকা, গ্রেড-আট ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-নয় ৩২ হাজার ৩০০ টাকা, গ্রেড-দশ ২৪ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-এগারো ১৯ হাজার ৮২৫ টাকা, গ্রেড-বারো ১৮ হাজার ৮৫ টাকা, গ্রেড-তেরো ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা, গ্রেড-চৌদ্দ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-পনেরো ১৬ হাজার ২৫০ টাকা, গ্রেড-ষোলো ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা, গ্রেড-সতেরো ১৫ হাজার ২০০ টাকা, গ্রেড-আঠারো ১৫ হাজার টাকা, গ্রেড-উনিশ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা, গ্রেড-বিশ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ভাতাসমূহ ॥ পার্বত্য জেলাগুলোর জেলা সদর ও সদর উপজেলায় নিযুক্ত সব চাকরিজীবীদের জন্য মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য উপজেলার জন্য মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পাহাড়ি ভাতা প্রদান করা হবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মস্থল হলে গ্রেড ১১-২০ পর্যন্ত চাকরিজীবীদের জন্য যাতায়াত ভাতা মাসিক ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। সকল কর্মচারী সন্তানপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা এবং অনধিক ২ সন্তানের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা ভাতা পাবেন। একুশ বছর পর্যন্ত সন্তানরা শিক্ষা সহায়তাভাতা পাবেন। এছাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাংলা নববর্ষ ভাতা ও আয়করের আওতাভুক্ত সব জনবল বাধ্যতামূলকভাবে নিজের বেতন খাতের আয়সহ মোট আয় নিরূপণ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
×