ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলায় সেমিনার

ডিজিটাল কানেক্টিভিটির জন্য সবার এক সঙ্গে কাজ করার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

ডিজিটাল কানেক্টিভিটির জন্য সবার এক সঙ্গে কাজ করার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারলে দ্রুতই দেশে ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কারও একার পক্ষে এ কাজ করে সবার জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই সরকারের সঙ্গে আইসিটি নিয়ে কাজ করা ইন্ডাস্ট্রি, মোবাইল ফোন অপারেটর, মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রির এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলায় আয়োজিত ‘ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটি’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। সফটওয়ার উৎপাদন ও রফতানীকারী সংগঠন বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান বলেছেন, ভবিষ্যতে স্কাইপির মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হঠাৎ নোটিসে বন্ধ করা হলে এর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলন শুরু করা হবে। এর আগে একদিন স্কাইপিসহ সমধর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকার কারণে সফটওয়্যার রফতানিকারক এবং আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত তরুণ উদ্যোক্তাদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। এ কারণেই সরকার যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত না নেন সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আন্দোলনে নামবে বেসিস। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসান। এছাড়া ডিজিটাল এ্যাপ্লিকেশনের ওপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গ্রামীণফোনের ডিজিটাল সার্ভিস বিভাগের ব্যবস্থাপক মুনতাসীর হোসাইন। সেমিনারের আয়োজক এক্সপো মেকার। সেমিনারের শুরুতেই গ্রামীণফোনের ডিজিটাল ও ডিভাইসের জেনারেল ম্যানেজার মুনতাসীর হোসেন ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটি নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন। প্রেজেন্টেশনে তিনি দেশে ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটির জন্য তিনটি বিষয় তুলে ধরেছেন। ইন্টারনেট, ডিজিটাল সার্ভিসেস বা কনটেন্ট ডেভেলপড এবং ডিভাইস। এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করলেই কেবল সব শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবা দেয়া। গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটির জন্য শুধু নির্দিষ্ট করে কোন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করলে হবে না। সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যাদের আবার স্মার্টফোন ব্যবহার করে মাত্র ২০ শতাংশ। গ্রামীণফোনের হিসাবে স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহারের গ্রোথ এখন ১৯ শতাংশ। আমাদের আসলে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বেড়েছে। এর সঙ্গে কনটেন্টও বাড়াতে হবে। আমরা কাজ করছি একটি প্ল্যাটফর্ম করে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, শুধু ডিভাইস দিয়েও কাজ হবে না। ডিভাইসের জন্য যেমন কনটেন্ট দরকার তেমনি দরকার কানেক্টিভিটি। আসলে সবই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। সেমিনারে গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, গ্রামীণফোন বিগত সময়ে গ্রাহকদের জন্য বেশকিছু ডিজিটাল এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে সফটওয়ার নির্মাতাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় এ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে গ্রামীণফোন আগ্রহী বলেও তিনি জানান। মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশীর কবীর বলেন, ডিজিটাল এ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার উপযোগী হ্যান্ডসেটসহ ডিভাইস সাধারণ গ্রাহক যেন সাশ্রয়ী মূল্যে পায় সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, ডিজিটাল সেবা দেয়ার জন্য দেশে শক্তিশালী ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং আরও কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরী। মোবাইল ফোন ইমপোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বিদায়ী বছরে দেশে ৬০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরে ৯০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন। দেশে বর্তমানে সর্বনিম্ন ২১৯০ টাকায় স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর এর দাম দুই হাজার টাকার নিচে নেমে আসবে। এদিকে সমাপনী দিনে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় গ্রামীণফোনের পৃষ্ঠপোষকতায় এক্সপো মেকার আয়োজিত স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলায়। লম্বা লাইন দিয়ে টিকেট কেটে মেলায় প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অসংখ্য স্মার্টফোন ও ট্যাবের সম্ভাবনা থেকে কিনে নেন পছন্দেরটি। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলার শেষ দিনে ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিভিটি শিরোনামে এই সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সোনিয়া বশির কবির, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, টেলিকম রিপোটার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদ মেহেদী এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ খান প্রমুখ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা-২০১৬’। এবারের মেলায় আকর্ষণীয় ছাড়ে ক্রেতারা প্রযুক্তি পণ্য কিনেছেন। চার জিবি র‌্যাম, ১২৮ জিবি মেমোরিসহ ৫ দশমিক ৫ ইঞ্চি এইচডি ডিসপ্লের ‘জেনফোন ডিলাক্স’ হ্যান্ডসেটটি ইতোমধ্যে বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারে আলোড়ন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের বাজারে এতদিন না মিললেও ‘গ্রামীণফোন স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলা’য় দেখা গেল আকর্ষণীয় এই মোবাইল হ্যান্ডসেট। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনের এই মেলায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। মেলায় উন্মুক্ত হওয়ায় স্মার্টফোনটি এখন থেকে বাংলাদেশী গ্রাহকদের হাতের নাগালেই ছিল। মেলায় স্মার্টফোনটি এনেছে আসুসের বাংলাদেশের ডিস্ট্রিবিউটর প্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড। নতুন মডেলের স্মার্টফোনটি নিয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহের শেষ ছিল না। আসুসের স্টলে অনেক ক্রেতাই এটি বুকিং দিয়েছেন। জেনফোন ডিলাক্স নয়, আসুস ব্র্যান্ডের আরও কয়েকটি দামি হ্যান্ডসেট প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছিল। জেনফোন ডিলাক্স মোবাইলটির দাম পড়ছে ৪০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে এক বছরের অফিসিয়াল সার্ভিস ওয়ারেন্টি। হ্যান্ডসেট ছাড়াও আসুসের স্টলে ছিল জেনফোন ২, জেনফোন ২ লেজার, জেনফোন সেলফি মডেলের স্মার্টফোন। প্রতিটি মোবাইল ফোন কিনলে ক্রেতারা পাচ্ছেন একটি টি-শার্ট উপহার। আসুসের ডিস্ট্রিবিউটর গ্লোবাল ব্র্যান্ডের হেড অব ব্র্যান্ড সেলিম আহম্মেদ বাদল বলেন, গুণগত মান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি আসুসের প্রতিটি পণ্য। যার ফলে গ্রাহকরা আস্থার সঙ্গে আসুসের পণ্য কিনছেন। আশা করছি নতুন মডেলের জেনফোন ডিলাক্স মোবাইলটি গ্রাহকরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছেন। মেলায় বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পাওয়া যাচ্ছে। স্যামসাং, সিম্ফনি, হুয়াওয়ে, এলিট, হেলিও, স্টাইলাস, গোল্ডবার্গ, আসুস, লেনোভা, মাইসেল, টুইনমস, প্রেস্টিজিও, শিয়াওমি, গ্যাজেট গ্যাং সেভেনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড এতে অংশ নিয়েছিল।
×