ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড্রোন উৎসব

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

ড্রোন উৎসব

ড্রোনকে অনেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধদানব বলে থাকে। তবে বহুদিন ধরে বেসামরিক কাজেও চালকবিহীন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। জার্মানিতে সাধারণ ইলেক্ট্রনিক দোকানে ৩০০ ইউরোর কমেও এমন ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়। মডেল বিমানের তুলনায় অনেক বেশি চটপটে ও দ্রুত এগুলোকে রেসিং ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার বলা হয়। সম্প্রতি বার্লিনে অনুষ্ঠিত ড্রোন উৎসবে পাইলটরা রেসিং কোয়াডকপ্টার নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামেন। রেসিং কোয়াডকপ্টার রেসিংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে। কোয়াডকপ্টারের ৪টি মোটর রয়েছে। মাঝে রয়েছে এক স্টারবোর্ড, যা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সবসময়ে দুটি ক্যামেরা থাকে। একটি ভিডিও তোলে, অন্যটি সব দৃশ্য সরাসরি এই চশমায় সম্প্রচার করে। পাইলট কোনদিকে উড়ছে তা দেখতে পায়। পাইলট ক্যামেরার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উড়ালের উপর নজর রাখতে পারেন। একে ‘ফার্স্ট পার্সন ভিউ’ বা এফপিভি বলা হয়। ভিডিও-চশমার মাধ্যমে পাইলট দেখতে পান, কপ্টার কী ছবি তুলছে। মনে হয়, তিনি নিজেই যেন সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে উড়ে চলেছেন। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক অনুশীলনের প্রয়োজন। হবি পাইলট মার্সেল স্পার বলেন, ‘ঠিক মনে হয়, নিজেই যেন কপ্টারের ভেতরে রয়েছি। ক্যামেরা ও ভিডিও-চশমার মাধ্যমে প্রথম যে দুটি উড়ালের চেষ্টা করেছিলাম, সে সময়ে সব কিছু এতই বাস্তব মনে হয়েছিল, যে একবার ঘোরানোর সময় সিট ছেড়ে পড়েই গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, ঠিক যেন মাঠের ওপর এক পাখি ওড়াচ্ছি।’ বাংলাদেশের প্রথম ড্রোন ২০১৪ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রেজুয়ানুল হক নাবিল, মারুফ হোসেন রাহাত ও রবি কর্মকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে প্রথম ড্রোন তৈরি করা হয়। ড্রোন তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। স্মার্টফোনে চারটি প্রপেলার, দুটি ক্যামেরা, ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনের নাম ‘কোয়াড্রোকপ্টার’। স্মার্টফোন রিমোট হিসেবে ব্যবহার করে এই ড্রোন ওড়ানো যায়। ক্যামেরায় তোলা ছবিও ফোনের পর্দায় দেখা যায়। গাছ পর্যবেক্ষণে ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ড্রোন দিয়ে গাছের চূড়া পর্যবেক্ষণ করেন। গাছের থ্রিডি মডেলও তৈরি করেন। বিশেষ এ ড্রোনটি ডালে-ডালে, পাতায়-পাতায় নজর রাখতে পারবে। মায়ের বিকল্প মায়ের বিকল্প কিছু হতে পারে না-কি? তবে ড্রোন হতে পারে! তবে তা পশুপাখির জন্যে। মিউনিখ ও বোলোনিয়ার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। অনাথ পক্ষিশিশুদের বাঁচাতে ড্রোনই হয়ে উঠছে মা-পাখি। দমকলে জার্মানিতে কয়েক বছর ধরেই দমকল ড্রোন ব্যবহার করছে। তারা বিশেষ ইনফ্রারেড ক্যামেরা নিয়ে আকাশ থেকে নিখোঁজ মানুষের খোঁজ করে। বিপজ্জনক এলাকায় গিয়েও ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র। তেজস্ক্রিয় রক্ষায় জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। কোন ঝুঁকি নিতে হয়নি। সেই ছবি থেকে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল। সন্ত্রাস দমনে ভারতেও ড্রোন নিয়ে গবেষণা চলছে। ব্যাঙ্গালোরের কাছে অনেক এয়ারোস্পেস সংস্থা মিনি-ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এই ড্রোন আকাশ থেকে এলাকার ছবি তুলতে পারবে। মোবাইল টাওয়ারে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নতির কাজ চলছে। যেমন ইলমেনাউ-এর গবেষকরা এমন এক কোয়াড্রোকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা মোবাইল টাওয়ার মেরামত করতে পারবে। ডুবুরি ‘ডিপ ড্রোন ৮০০০’ নামের এই যন্ত্র উড়তে পারে না বটে, কিন্তু ড্রোন মানববিহীন হলেই চলবে। তাই ড্রোন ডুবুরিও হতে পারে। মার্কিন নৌ-বাহিনীর তৈরি এই ড্রোন ২,৫০০ মিটার গভীরে গিয়ে ডুবোজাহাজ উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।
×