ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিক্ষোভ, অবরোধ দুই কনস্টেবল বরখাস্ত

ভোলায় পুলিশের লাঠির আঘাতে পুকুরে ডুবে কৃষকের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১১ আগস্ট ২০১৫

ভোলায় পুলিশের লাঠির আঘাতে পুকুরে ডুবে কৃষকের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ১০ আগস্ট ॥ ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের লঞ্চঘাট সড়কের ওপর ধান শুকানোর অপরাধে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের পিটুনিতে ধাওয়া খেয়ে কৃষক আবু জামালের (৪৫) পুকুরে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজিত কয়েক হাজার মানুষ পুলিশের দ্রুত বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করে দুপুর পর্যন্ত ভোলা-ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে ঘেরাও করে রাখে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোলা থেকে বরিশাল যাওয়ার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট যাওয়ার রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অভিযোগ উঠেছে, দুপুরে এ ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে নিহতের পরিবারকে ম্যানেজ করা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে ৬ লাখ টাকার মৌখিক সমঝোতার মাধ্যমে অবরুদ্ধ ওই ২ পুলিশ কনস্টেবলকে উদ্ধার করে পোস্ট মটেম ছাড়াই দাফন করা হয়। এমনকি কোন মামলাও হয়নি। এদিকে এ ঘটনায় জনতার হাতে আটককৃত ২ পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে ভোলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান নিশ্চিত করেন। তবে এখনও পুলিশ ওই কনস্টেবল ২ জনকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেননি। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী শাহাবুদ্দিন, আব্দুল মালেকসহ একাধিক ব্যক্তি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভোলা সদরের ভেলুমিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কনেস্টবল আব্দুল হান্নান ও মাইনুল ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে ডিউটিতে যাচ্ছিল। ওই সময় ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া গ্রামের হেতনারহাট বজলুর বাপের দোকানের সামনে মোঃ শাজাহানের ছেলে কৃষক দিনমজুর আবু জামাল (৫০) ভোলা-ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট সড়কের ওপর ধান শুকাচ্ছিল। এ সময় ওই দুই পুলিশ কৃষক জামালকে কেন রাস্তায় ধান শুকাচ্ছে তা জিজ্ঞেস করে। এক পর্যায়ে কনস্টেবল আব্দুল হান্নান কৃষক আবু জামালকে লাঠি ছুড়ে আঘাত করে। এ সময় ধাওয়া খেয়ে লাঠি মাথায় লেগে আবু জামাল পুকুরে পড়ে যায়। প্রথমে একজন পুকুরে খোঁজাখুঁজি করে। পরে এলাকাবাসী জাল দিয়ে আবু জামালকে উদ্ধার করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধারের পরই শত শত মানুষ জড়ো হয়ে আবু জামাল হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে। এক পর্যায়ে কনস্টেবল আব্দুল হান্নান ও মাইনুলকে এলাকাবাসী সাবু হাওলাদারের ঘরে আটকে রাখে। এ সময় খবর পেয়ে ভোলা মডেল থানার ওসি মোবাশ্বের আলীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় ওসি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। তবে কনস্টেবল মাইনুল সাংবাদিকদের বলেন, কনস্টেবল হান্নানকে দেখে কৃষক আবু জামাল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পিছন থেকে লাঠি ছুড়ে মারে। এ সময় লাঠি পায়ে লাগে। জামাল পিছল খেয়ে পুকুরে পড়ে যায়। পরে তাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সে মারা যায়। এদিকে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেনসহ এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। কিন্তু পুলিশ সমঝোতার চেষ্টা করছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনা একদিন আগে এ এস আই ফোরকান নামে ভেদুরিয়া বার তারিখ এলাকা থেকে ২ কৃষককে রাস্তায় ধান শুকানোর অপরাধে আটক করে। পরে তাকে ম্যানেজ করা হলে কৃষকদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঘটনা স্থল পরির্দশন করে বলেন, নিহত জামাল পুলিশের প্রহর থেকে বাঁচার জন্য পালানোর সময় একটি ডোবায় পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ২ পুলিশ কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার চাইলে মামলা করতে পারবে। এদিকে দুপুর ১টার দিকে ঘটনা স্থলে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস, ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই মাস্টারসহ নিহতের ভাই কামাল, চাচা মোতাহার হোসেনসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত পুলিশ পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। এছাড়াও ওই সমঝোতা বৈঠকে ৬ লাখ টাকা নিহতের পরিবারকে দেয়া হবে বলেও শোনা গেছে। তবে লিখিত কোন চুক্তি হয়নি। যে কারণেই পোস্টমটেম ছাড়াই কৃষক জামালের লাশ দাফন করা হয়। তবে এ ব্যাপারে ভোলা পুলিশ সুপার, ওসি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের মোবাইলে ফোন করা হলে তারা রিসিভ করেননি।
×