ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুঁজিবাজারে দুটি ধসই এড়ানো যেত

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২ আগস্ট ২০১৫

পুঁজিবাজারে দুটি ধসই এড়ানো যেত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে সৃষ্ট ধস মানবসৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ও দুটি ধসই এড়ানো যেত। কিন্তু তা করা যায়নি। ২০১০ সালের ধসে শুধু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই নয় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে শুক্রবার পুঁজিবাজার বিষয়ে তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন হিসাব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ব্যাংকিং এ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী বাইয়াতুল ইসলাম, এ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রশিক্ষণের প্রধান সমন্বয়ক ড. মিজানুর রহমান, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরোমের (সিএমজেএফ) সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু। ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজার ধসে বাজার মধ্যস্থকারীদের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। পুঁজিবাজার যখন চাঙ্গা ছিল তখন অনেক মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে এসেছিল। এখন সে ফান্ডগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ ফান্ডের দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে শুধু তাই নয়, সম্পদমূল্যের নিচেও অবস্থান করছে। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মার্জিন লোনের কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এটা সবাই জানে। অথচ তা থেকে উত্তরণে কেউ কোন কাজ করছে না। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দুটি দুর্যোগ হওয়ার পরও আমরা সে থেকে এখনও শিক্ষা নিতে পারিনি। বাজার সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার সবার জন্য নয়। যাদের বাজার সম্পর্কে মৌলজ্ঞান নেই তাদের এ বাজারে আসা উচিত নয়। আর যদি আসে তাহলে তাদের হাত আগুনে পুড়বেই। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার বড় ধরনের ভূমিকা থাকলেও আমাদের দেশে তা হয়নি। ৬০ বছরের বেশি সময় পার হলেও দেশের শিল্পায়নে এখনও আমাদের পুঁজিবাজারের ভূমিকা এখনও গৌণ। আমাদের দেশের উদ্যোক্তারাও এখন অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ব্যাংক খুব সহজেই ঋণ পাওয়া যায় বলে উদ্যোক্তারা সেখান থেকেই ঋণ গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অথচ ব্যাংকের অর্থায়ন অনেক বেশি ব্যয় সাপেক্ষ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে একদিনেই সূচকের ৫০০ পয়েন্ট পতন হয়েছিল। এটা অবশ্যই পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়। সে বিপর্যয়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরে এসেছে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর এ্যাকাউন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ্যাকাউন্টের সঙ্গে বাজারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সম্পর্ক রয়েছে। বাজার সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা এখানে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। এজন্য না জেনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রফেসর মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে না পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বাজার সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×