ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকলোভীর নৃশংসতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ জুলাই ২০১৫

যৌতুকলোভীর নৃশংসতা

নারীর ওপর নির্যাতন যেন আর শেষই হচ্ছে না। কতভাবে, কত বিচিত্র উপায়ে নির্যাতন করা যায়- এর নিরীক্ষা যেন চলছে নারীর ওপর! ভাসুর দেবর ননদ মিলে গৃহবধূকে বেঁধে ফেলে তার বুকের ওপর চেপে বসে ইলেক্ট্রিক টেস্টার দিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে ফেলেছে পাষ- এক স্বামী। সপ্তাহান্তে এমন সংবাদ জনকণ্ঠে পাঠ করে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। কোথায় চলেছে আমাদের সমাজ? স্মরণযোগ্য, কয়েক বছর আগে স্বামী কর্তৃক শিক্ষিত স্ত্রী রোমানার চোখ উপড়ে ফেলার বিষয়টি দেশে সাড়া ফেলেছিল। সমাজে নারীরা এগিয়ে চলেছেন, সাধারণভাবে এ কথা আমরা বলে থাকি। বিগত বছরগুলোয় নারীর অবস্থা ও অবস্থানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে বলেও আমরা মাঝেমধ্যে আত্মশ্লাঘা অনুভব করে থাকি। অথচ হঠাৎ হঠাৎ এমন সব নারী নির্যাতনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেগুলোর প্রকৃতি ও অন্তর্নিহিত নির্মমতার পরিচয় পেয়ে আমাদের বিবেক যেন বিবশ হয়ে পড়ে। আমরা অনুধাবনে সক্ষম হই যে সমাজ থেকে এখনও দূর হয়নি অন্ধকার। এখনও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে দাপটের সঙ্গে বিরাজ করছে। এখনও স্বামীর হাতে স্ত্রীর মানসিক ও শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে এটাও অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে আমাদের সমাজে যে পরিমাণে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে তার বড় অংশই গণমাধ্যমে অপ্রকাশিত থেকে যায়। বহু নারী মুখ বুজে সর্বংসহা হয়ে লাঞ্ছনা ও পীড়ন সহ্য করে যান। এ কথা খুব কাছের দুয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। আমাদের সমাজে পারিবারিক সহিংসতার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ‘নির্যাতন’ শব্দটা আমাদের কাছে অনেকটাই শারীরিক। কিন্তু মানসিক নির্যাতন, ভয় দেখানো, অসম্মানজনক আচরণ, হেয় করা, হুমকি-ধমকি দেয়া, অকারণে দোষারোপ করা, কোন কাজে জোর জবরদস্তি করা, শারীরিক বা মানসিক আঘাত ইত্যাদিও ‘নির্যাতন’ বোঝায়। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরো পরিচালিত এক সার্ভেতে (বিবিএস, ২০১১) উঠে এসেছিল বিভীষিকাময় সব তথ্য। বিবাহিত জীবনে ৮৭% নারী কোন না কোন সময়ে স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন এবং সার্ভের আগের এক বছরে এই সংখ্যা ৭৭% ছিল। এর মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি ছিল, শারীরিক নির্যাতনের (৬৫%) তুলনায়। বাংলাদেশে আছে শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন, যে আইন বার বার সংস্কার করতে হয়েছে। কারণ দেখা গেছে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে, আবার নির্দোষ অনেককে এ আইনের ফাঁদে পেতে কেউ কেউ নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। ঈদের আগের দিন শুক্রবার সাভারের কলমা জিঞ্জিরা এলাকায় নারী নির্যাতনের যে বর্বর ঘটনা ঘটেছে তার অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মনে করে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা স্বামীর অধিকার। এ মানসিকতা অনেক উচ্চশিক্ষিত পুরুষের মাঝেও আছে। এ মানসিকতার পরিবর্তন করলেই সমাজের বহু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু আইন দিয়ে সমাজের এই অন্যায় অনাচার দূর করা সম্ভব নয়। যৌতুকলোভী নির্যাতক স্বামীদের অবশ্যই কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
×