ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অক্টোবরে পাইলিং উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু ॥ নাব্য সঙ্কটে ভাসমান ক্রেন জাজিরায় নেয়া যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ জুলাই ২০১৫

পদ্মা সেতু ॥ নাব্য সঙ্কটে ভাসমান ক্রেন জাজিরায় নেয়া যাচ্ছে না

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ নদী ভাঙ্গন ও উত্তাল পদ্মার দাপাদাপি ছাপিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তবে নাব্য সঙ্কটে ভারি যানবাহন পদ্মা পাড়ি দিতে না পারায় জাজিরা প্রান্তে সেতুর কাজে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটছে। ইতোমধ্যে মূল সেতুর ১০.৬২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন কেন্দ্র করে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বিশেষ কটেজ। পদ্মা সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই প্রতিটি কাজ শেষ হচ্ছে। তাই সিডিউল অনুযায়ী কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দশটি টেস্ট (পরীক্ষামূলক) পাইলিংয়ের মধ্যে তিনটি টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১২ ভায়াডাক্টের মধ্যে চারটির কাজ শেষ হয়েছে। এসব টেস্ট পাইলের ওপর তিন হাজার টন ওজন চাপিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে পদ্মার বালু অত্যধিক সরু হওয়ায় এ পরীক্ষায় কিছুটা টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে। তবে এটি খুব বড় কিছু নয়। অচিরেই সমাধান হবে। ৩ মিটার ডায়ার কনস্টাবিলিটি পাইল ফেব্রিকেশনের কাজ চলছে। গত জুনের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত মূল সেতুর ১০.৬২ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি জানান, নবেম্বরে মূল পাইলিং কাজ শুরুর কথা থাকলেও এর আগেই অক্টোবরের শেষের দিকেই তা করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ কাজের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় মাওয়ায় ভিভিআইপি কটেজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১০ নম্বর কটেজটি প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে নাব্য সঙ্কটে ভারি যানবাহন পদ্মা পাড়ি দিতে না পারায় জাজিরা প্রান্তে সেতুর কাজে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটছে। তবে ঈদের পূর্বেই তা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বলেন, পদ্মার মাঝের চরে পানি কম থাকায় পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহৃত ভাসমান ভারি ক্রেন নদীর ওপারে জাজিরা প্রান্তে যেতে পারছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের নিজস্ব ড্রেজারের মাধ্যমে চ্যানেলে ড্রেজিং করে ক্রেনসহ ভারি যন্ত্রপাতিগুলো পদ্মার ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তা ঈদের আগেই সম্পন্ন করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন এলাকায় নদীর ভাঙ্গন দেখা দিলেও তা সেতুর কাজে তেমন কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার জিও ব্যাগভর্তি বালু নদীতে ফেরা হয়েছে। ঈদের আগে সাড়ে তিন লাখ জিও ব্যাগ পদ্মায় ফেলা হবে। আপাতত ওই এলাকায় ভাঙ্গন নেই। তার পরেও ভাঙ্গনের গতিবিধি আগামী তিন মাস পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেজন্য এক লাখ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আপৎকালীন সময়ে এজিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন মোকাবেলা করা হবে। এদিকে পদ্মা পাড়ে স্বপ্নের ঝিলিক মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। উন্মোচিত হতে শুরু করেছে সম্ভাবনার দ্বার। সেতুর দুই প্রান্তে হংকংয়ের মতো আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সরকার হাতে নিয়েছে মহাপরিকল্পনা। বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে অলিম্পিক ভিলেজ। থাকবে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বিশ্বমানের আধুনিক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গড়ে তোলা হবে আধুনিক শিল্পনগরী। পর্যটকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিতে গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। বাদ যাবে না মসজিদ-মাদ্রাসাও। আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাও এ পদ্মা পাড়ের নগরীতে করার পরিকল্পনা করছে সরকার। আর এ সকল কিছুই হচ্ছে দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতুকে ঘিরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা পাড়ে সরকার ভিন্ন ভিন্ন নগরী গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। জনসাধারণের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হবে আধুনিক আবাসিক শহর। আবার শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য গড়ে তোলা হবে আধুনিক অসংখ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। শিল্প ও নগরায়ন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক থাকবে না। ঢাকা শহরকে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে সরকার এ মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন শহরে সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ থাকবে মসজিদ-মাদ্রাসা। পদ্মাপাড়ে গড়ে তোলা হবে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে থাকবে দৃষ্টি নন্দন লেক, পুকুর। আর এসব ঘিরে সৃষ্টি হবে বিপুল কর্ম সংস্থানের। তাই পদ্মা সেতুর কাজের পাশাপাশি পদ্মা পাড়ের এ শহর ও সেতু এলাকায় দ্রুত যাতায়াতের জন্য সরকার রাজধানী ঢাকার শান্তিনগর ও জিরো পয়েন্ট থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ ফ্লাইওভার হলে ঢাকাবাসী পদ্মাপাড়ের এ শহরে আসতে তথা দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষকে ঢাকায় যেতে আর যানজটে পড়তে হবে না। তাছাড়া রেললাইনও তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে রাখা হয়েছে রেল যাতায়াত ব্যবস্থা। সরকারের কথা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু খুলে দিলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরেক দাপ এগিয়ে যাবে।
×