ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৩০ জুলাই ২০২৫

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক ৮৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বিদ্যালয়ের ভবন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। আর এসব জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১২টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকলেও ওই তালিকার বাহিরেও আরও ৮টি বিদ্যালয়ের ভবন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনের অধিকাংশই নির্মিত হয়েছে দীর্ঘ দুই থেকে তিন দশক আগে। সময়ের পরিক্রমায় ভবনগুলোর ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল, দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কোথাও আবার টিনের চাল ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ছে শ্রেণিকক্ষে।
জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনে প্রতিদিন পাঠদান করছেন শিক্ষকরা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠ নিচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষ ভিজে যায়, অনেক সময় বই-খাতাও নষ্ট হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে উপজেলায় ১৪ নং নিয়ামতি ইউনিয়নের কাফিলা রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন। বিদ্যালয়টি এই উপজেলার অন্যতম প্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

১৯৪৭ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া ১ একর ৯০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন কাফিলা রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে দুটি পাঠদান কক্ষ ও একটি অফিস কক্ষের একতলা একটি ভবন পেলেও তাও এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। 
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন জরাজীর্ণ এই ভবনে। বিদ্যালয় ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় বর্তমানে তা চরমভাবে জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ছাদে ফাটল, দেওয়ালে চিড় ধরেছে, প্লাস্টার খসে পড়ছে। একটু বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর। যে কারণে ছোট বড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। যে কোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৪ সালে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি সেমিপাকা টিনসেড ভবন নির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে জরাজীর্ণ পুরাতন ওই সেমিপাকা টিনসেড ভবনটিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্য কোনো শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই ওই জরাজীর্ণ ভবনের কক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। 
কাফিলা রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বৃষ্টি নামলেই ক্লাসরুমে পানি ঢুকে পড়ে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্কুলের একটি নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিত রয়েছে বোয়ালিয়া জেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন। ১৯৫৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে কোনো পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়নি।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিন সেডের ঘরেই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে আসছিল। ২০০৭ সালে নতুন করে দুটি টিনসেড সেমিপাকা ভবন নির্মাণ করা হলেও এখন তাও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই বিদ্যালয়েও চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই টিনের চালা থেকে শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেন ছাতা মাথায় দিয়ে। 
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

প্যানেল হু

×