
ঢাবিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রবল প্রতাপশালী আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীজন হয়েছে। কিন্তু বছর পার হলেও অর্ধশত পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে শুরু করা যায়নি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরত চাপই এমন অবস্থা তৈরি করেছে। অবশেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু), রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে (জাকসু) ছাত্র সংসদ নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ^বিদ্যালয় তিনটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। যা নিয়ে দেশের বৃহৎ ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশ এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার নানা আলোচনার মধ্যেই ডাকসু নিবাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। যা কীনা দীর্ঘ ২৮ বছর পর। অন্য দিকে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে তিন দফায় পিছিয়েছে জাকসুর নির্বাচনের তারিখ। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের নতুন সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নানা অজুহাতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন থেকে দূরে সরে আছে। আবার কেউ কেউ প্রস্তুতির কথা বলে সময়ক্ষেপণ করছে। সব বিশ^বিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্যরা দায়িত্ব নিলেও তারা এটি নিয়ে ভাবছেন না। যা আমাদেরকে আশাহত করছে। সূত্র জানায়, দেশে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। যে কারণে বিশেষ আইনে চলা অন্য বড় দুটি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইউকসু) নির্বাচনে এখনো কোনো রূপরেখা দেয়নি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর সঙ্গে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন ও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জড়িত। এই দুই পক্ষের চাওয়া না মিললেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়ে উঠে না। দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনা ছিল। নতুন নেতৃত্ব যেন তৈরি হতে না পারে সে বিষয়েও অদৃশ্য পক্ষের তৎপরতা ছিল। সূদুর প্রসারী পরিকল্পনার কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হয়নি। এ ছাড়াও সরকারের একদলীয় মানসিকাও বড় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
ছাত্রসংসদগুলোর নির্বাচনে বারবার কেন বিলম্ব হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীরগনর বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, একটা পরিবর্তনের পরে আমরা সকল বিষয়গুলোকে ঠিক না করে ছাত্রসংসদ নির্বাচন- যেটা আমাদের সকলের কাঙ্খিত চাওয়া, প্রথমেই ঝাপিয়ে পড়েছি। অথচ আমাদের নিজেদের মনন, চিন্তা এবং কার্যক্রমের সমন্বয় নেই।
ক্রমাগতভাবে যেমন রাষ্ট্রে অনৈক্যের সুর, তেমন আমাদের বিশ^বিদ্যালয়গুলোতেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ঐক্যবদ্ধ শক্তিটাও এখন বিভক্ত। সেই কারণেই জাকসু নির্বাচন এগোচ্ছে না। এ ছাড়া প্রশাসন যেকোনো ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, নিরঙ্কুশ এবং অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংরক্ষণে চ্যালেঞ্জ মনে করছে বলেও আমার ধারণা।
ডাকসু নির্বাচন নির্বাচন ৯ই সেপ্টেম্বর ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, নানা আলোচনা-সমালোচনার পর দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ ঘোষণা দেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসিম উদ্দিন। এবারের নির্বাচনের আবাসিক হলের বাইরে মোট ৬টি কেন্দ্রে হবে ডাকসু নির্বাচন।
সর্বশেষ ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী থেকে বর্তমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তারা ডাকসু বা হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন বলে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ ৩০ জুলাই (বুধবার) খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকা নিয়ে আপত্তি জানানো যাবে ৬ আগস্ট বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর ১১ আগস্ট সোমবার বিকাল ৪টায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে ১২ আগস্ট, যা চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ২১ আগস্ট দুপুর ১টায় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রার্থীরা চাইলে ২৫ আগস্ট সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ২৬ আগস্ট মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় প্রকাশ করা হবে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনা এবং একই দিন ফলাফলও ঘোষণা করা হবে।
হল সংসদের ফলাফল সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে এবং ডাকসুর ফলাফল ঘোষণা করা হবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সিনেট সভাকক্ষে বলে জানান নিবার্চন কমিশনার প্রধান। অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুন্দর একটি নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারব।
যে ৬টি কেন্দ্রে হবে ডাকসুর ভোট ॥ কার্জন হল কেন্দ্রে (পরীক্ষার হল) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন; শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবে; ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ভোট দেবেন রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল ও কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা; সিনেট ভবন কেন্দ্রে (অ্যালামনাই ফ্লোর, সেমিনার কক্ষ, ডাইনিং রুম) ভোট দিতে পারবেন স্যার এএফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা; উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সূর্য সেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীম উদ্দীন হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় সংসদে ভোট হবে ২৮টি পদে ॥ ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৬(বি) ও ৩৭(৩) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৮টি পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ঘোষিত পদগুলো হলো: ১) সহ-সভাপতি, ২) সাধারণ সম্পাদক, ৩) সহ-সাধারণ সম্পাদক, ৪) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক, ৫) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, ৬) কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, ৭) আন্তর্জাতিক সম্পাদক, ৮) সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ৯) গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ১০) ক্রীড়া সম্পাদক, ১১) ছাত্র পরিবহন সম্পাদক, ১২) সমাজসেবা সম্পাদক, ১৩) ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক, ১৪) স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, ১৫) মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং ১৬) সদস্য ১৩ জন।
এ ছাড়াও ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, গঠনতন্ত্রের ১৭ ও ৫৮ অনুচ্ছেদের আলোকে এবারের নির্বাচনে হল সংসদে মোট ১৩টি পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট প্রদানে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র বা পে-স্লিপ সঙ্গে আনতে হবে। আবাসিক ও অনাবাসিক উভয় ভোটারই নির্ধারিত কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন।
তিন দফায় পিছিয়েছে জাকসুর নির্বাচনের তারিখ ॥ জাবি সংবাদদাতা ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি জানান, দীর্ঘ ৩৩ বছরের প্রতিক্ষার পর গত ৩০ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সে সময় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ৩১ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে একে একে নির্বাচনী আচরণবিধি, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তবে গত ২৬ জুন জাকসুর পরিবেশ পরিষদের ডাকা এক সভায় রাতভর নাটকীয়তার পর জুলাইয়ের বিচারের দোহাই দিয়ে ফের পেছানো হয় নির্বাচনের তারিখ। বাতিল করা হয় পূর্বে ঘোষিত তফসিল এবং খসড়া ভোটার তালিকা। সে সভায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের পূর্বে জুলাইয়ের হামলাকারীদের বিচার সম্ভব নয় এমন কারণ দেখায়। সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান একই সভায় আগামী ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের নতুন সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেন।
জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই জাকসুর দাবিতে সরব ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বারবারই আশার বাণী শুনিয়েছে প্রশাসন। এক পর্যায়ে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জাকসুর দাবিতে অনশনে বসলে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সে সময় ঘোষিত রোডম্যাপে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার কথা বলা হয়। জাকসুর জন্য গঠন করা হয় পরিবেশ পরিষদ। তবে পরিবেশ পরিষদের পরামর্শে ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা স্থগিত করা হয়।
এ দিকে, তিন বার নির্বাচন পেছানোর ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ^বিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, প্রশাসনের কার্যক্রমই বলে দিচ্ছে জাকসু নির্বাচন হবেনা। আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করবে। তখন আর জাকসু নির্বাচনের সুযোগ থাকবেনা। আরেক শিক্ষার্থী মারিয়াম আক্তার বলেন, তৃতীয়বার নির্বাচন পেছানোর পর ক্যাম্পাসে এখন আর নির্বাচনী আমেজ দেখি না। সিনেটে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ হয়ত আবারও হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনের বিষয়ে শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, কেবল বিচারের ইস্যুতে ৩ দফা জাকসু নির্বাচন পেছানো হয়েছে। তবুও শেষবারের মতো প্রশাসনের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহম্মদ বাবর বলেন, বারবার তারিখ পেছানোর কারণে নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন একটি চূড়ান্ত রোডম্যাপ দিলেই পারত।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ প্রশাসন জাকসু নিয়ে শুরু থেকে টালবাহানা করে আসছে। ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাইয়ের হামলার বিচারে সময়ক্ষেপণ করছে। এর উদ্দেশ্য যে ভালো নয় আমরা তা সহজেই অনুমান করতে পারি। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি জাকসুর বাস্তবায়ন চাই।
৩৫ বছর পর রাকসুর তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর ॥ রাবি সংবাদদাতা লুবনা শারমিন জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক এই তফসিল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে কমিশন বদ্ধপরিকর। তিনি সকল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই রাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশিত হবে। এরপর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে আগস্টের ৬ তারিখ। ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির সময়সীমা আগস্টের ৬ তারিখ ও ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা আগস্টের ২১, ২৪ ও ২৫ তারিখ। আগস্টের ২৭ ও ২৮ তারিখ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ৩১ শে আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ২ তারিখ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের করা যাবে।
এরপর সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ প্রত্যেক আবাসিক হলে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট গ্রহণ শেষে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
(রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদল এই প্রক্রিয়াকে ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে। অন্য দিকে, আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তফসিল ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী জানান, ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায় রাকসু! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক মুহূর্ত রচিত হচ্ছে।
তবে তফসিল ঘোষণাকে ‘প্রশংসনীয় পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এ বিষয়ে শিবিরের প্রচার সম্পাদক মো. নওসাজ্জামান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, ‘অবশেষে রাবি শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের আকাক্সিক্ষত রাকসুর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে এর কার্যক্রম অর্ধধাপ এগিয়ে গেল। রাবি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার পাবে ইনশাআল্লাহ।
এ দিকে ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা ব্যক্ত করে রাকসু, ডাকসু ও জাকসুকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা ও শিক্ষার্থী আন্দোলনের সংগঠক আল শাহরিয়া শুভ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানান, চাঁদাবাজি, হলদখল, গোপন ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তি নিপাত যাক এটাই প্রত্যাশা। ছাত্র রাজনীতি হোক শুধু শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য।
প্যানেল হু