ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী

মো. আকাশ মাহমুদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাংশা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২৫ জুলাই ২০২৫

পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী

ছবি: জনকণ্ঠ

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা সেবার নামে চলছে জনভোগান্তি। অপরিচ্ছন্নতা, ওষুধ সংকট, জনবল সংকট ও সুপর্যবেক্ষণের অভাবে হাসপাতালটিতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এদিকে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বহির্বিভাগে দেখা যায়, একটি মাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকায় শিশু সন্তান নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শিশুদের মায়েরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
একই চিত্র অর্থোপেডিক্সেও। একটি মাত্র হাড়ের ডাক্তার থাকায় সেখানেও রোগীদের লম্বা লাইন। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য ডাক্তারের সংকট।

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় উঠলেই দেখা যায় রোগীর পাশেই মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের দাগ। ময়লাযুক্ত পুরাতন বেডশিট, সেটাও আবার মাঝে মধ্যে পাওয়া যায় না। জেনারেটর না থাকায় রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর করে ভূতুড়ে পরিবেশ। ফলে বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে চিকিৎসা দিতে হয় নার্স ও চিকিৎসকদের। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমে অসহনীয় কষ্ট করতে হয় রোগী ও রোগীর স্বজনদের।

ময়লাযুক্ত ড্রেনের কারণে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিটি ওয়ার্ডের বাথরুমে গেলে দুর্গন্ধের তীব্রতায় সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়।
মেলে না প্রয়োজনীয় ওষুধ, বছরের পর বছর ধরে দেখানো হয় ওষুধের সংকট। নামমাত্র কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাকি প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে বলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন ইচ্ছামতো ওষুধ নিয়ে যান। দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই ড্রাইভার, অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সেটিও। যার ফলে স্বল্প খরচে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়ার সৌভাগ্য আর রোগীদের হয় না।

রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে নার্সদের অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগও রয়েছে প্রচুর।

দীর্ঘ বছর এমন অবস্থা চললেও স্বাস্থ্য দপ্তরের নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে জনভোগান্তি দূর করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জনসাধারণের।

জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই পাংশা উপজেলায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১০ জন মানুষ বসবাস করেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যার একটি সরকারি হাসপাতাল।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়নের মানুষ এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও খোকসা উপজেলার মানুষও চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন এ হাসপাতালে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে আসা একজন বলেন,
‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। আসার পর থেকেই খাবার ও পানি কম খাচ্ছি যাতে টয়লেটে না যেতে হয়। টয়লেটে এমন অবস্থা যে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এখানে সেবা বলতে কিছু নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এবতদত হোসেন বলেন,
নিয়ম অনুসারে কনসালটেন্ট, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মেডিকেল অফিসার সব মিলিয়ে ৩১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ৯ জন। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চাইতে দুই গুণ-তিন গুণ বেশি রোগী হওয়ায় অধিকাংশ সময়ই চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিয়মিতই হয়।
অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগতপূর্বক প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে।

মুমু ২

×