ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইবির সাজিদের ফোনকল নিয়ে রহস্য, ‘লাশ ভেসে ওঠার পরেও রিসিভ করলো কে?’

নিজস্ব সংবাদদাতা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫৩, ২৫ জুলাই ২০২৫

ইবির সাজিদের ফোনকল নিয়ে রহস্য, ‘লাশ ভেসে ওঠার পরেও রিসিভ করলো কে?’

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর ফোন কল রিসিভ হওয়া নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই রহস্যের সমাধান যেন মিলছেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে তার লাশ ভেসে ওঠার পরেও ফোন কল রিসিভ হয়েছে বলে দাবি তার বন্ধুর ইনসানের। তাছাড়াও ক্যাম্পাসে তাকে সর্বশেষ দেখা যাওয়ার পর থেকে মরদেহ ভেসে ওঠার মধ্যে ২৬ ঘন্টায় সাজিদের ফোনে মোট ৫ বার কল রিসিভ হয় বলে দাবি করেছেন তার একাধিক সহপাঠী। তবে এসময় অপরপাশ থেকে কারো কথা শোনা যায়নি বলেও দাবি কলাদাতাদের।

কলদাতা দাবিকারীরা হলেন– আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ইমরান জাহান, চারুকলা বিভাগের নুসরাত ঐশী ও আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ইনসানুল ইমাম করেছিলেন বলে দাবি তাদের। অবশ্য কল রিসিভ হলেও অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে দাবি কলদাতাদের।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ইনসান তার ফোন হ্যাক হয়েছে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং থানায় সাধারণ ডায়েরিভূক্তির (জিডি) আবেদন করেন। তার দাবি, সাজিদের সঙ্গে তার কল হিস্ট্রি এবং গ্যালারি থেকে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনশট ডিলিট হয়ে গেছে। তার এই ফেসবুক পোস্ট ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের করা ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা গেছে, সাজিদ সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩ টায় ফুটবল মাঠে খেলছিল। বিষয়টি তার সাথে খেলায় অংশ নেওয়া অন্য শিক্ষার্থীরাও নিশ্চিত করেছেন। ৪টার পরে তারা খেলা শেষ করেছিল বলে জানান। এদিকে জিয়া মোড়ে ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম তাকে সাড়ে তিনটার পর দেখেন বলে জানান।

তার ভাষ্য, ‘তিনি সাড়ে তিনটার পর বৃষ্টি থামলে দোকান খুলেছেন। এসময় তার দোকানের পাশ থেকে সাজিদ তার সাথে কথা বলেন।’ আব্দুল আলিমের পর কেউ আর তাকে দেখার বিষয়ে জানাননি। এদিকে খেলার মাঠে ও আলিমের সঙ্গে যে পোশাকে সাক্ষাৎ হয়; লাশ ভেসে উঠার পর তার গায়ে একই পোশাক দেখা গেছে। এদিকে মরদেহ ভেসে ওঠার সময় থেকে আগেরদিন ক্যাম্পাসে সর্বশেষ তাকে ঘুরতে দেখার মাঝের ২৬ ঘন্টায় তার মোবাইল ফোনে ৫ বার কল রিসিভ হয় বলে জানা গেছে।

বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টায় ৪৮ মিনিটে তার নাম্বারে কল দেন তার বন্ধু আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইমরান জাহান। ১৪ সেকেন্ডের মতো কল রিসিভ হলেও অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে জানান তিনি। আবারও কল দিলে একই ঘটনা ঘটে।

ইমরান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কথা শোনা যায়নি। এজন্য আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।’

পরদিন ক্যাম্পাসে মরদেহ ভেসে ওঠার খবর জানাজানি হওয়ার আধা ঘন্টা আগে তার বান্ধবী চারুকলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী নুসরাত ঐশী বিকেল ৫ টায় ৩ মিনিটে সাজিদের নাম্বারে কল দিলে ১৩ সেকেন্ডের জন্য কল রিসিভ হয়। এর আধা ঘন্টা পরেই পুকুরে মরদেহ ভেসে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়ে।

প্রথম কলের ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট পর এবং সাজিদের মরদেহ শনাক্ত হওয়ার পর সন্ধ্যা ৬ টায় ৪৮ মিনিটে সাজিদের নাম্বারে ঐশী আবারও কল দিলে তা ১০ সেকেন্ডের জন্য রিসিভ হয়। উভয় কলেই অপরপাশ থেকে কারও কথা শোনা যায়নি বলে জানান ঐশী।

এর মাঝে বিকেল সাড়ে ৫টার পর পুকুরে সাজিদের মরদেহ ভেসে ওঠে। পরে ৬ টায় ৪০ মিনিটে মরদেহ উদ্ধারের পর শিক্ষার্থীরা এটা সাজিদের মরদেহ বলে শনাক্ত করে। পরে ৬ টায় ৪১ মিনিটে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী সাজিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইনসানকে সাজিদের খোঁজ নিতে বলেন। তখন ইনসান সাজিদের রুমে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলেও দরজা খোলেনি বলে দাবি ইনসানের।

ইনসান বলেন, সাজিদের নাম্বারে কল দিলে ২৪ সেকেন্ডের জন্য রিসিভ হওয়া কলের রেকর্ড আমার কাছে থাকলেও কললিস্ট থেকে কল হিস্ট্রি ডিলিট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে সাজিদের নাম্বারে কলের ডিটেইলসের স্ক্রিনশটও ফোনের গ্যালারি থেকে হারিয়ে গেছে। আমার মনে হয়, আমার ফোন হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, মারা যাওয়ার আগে সাজিদের সঙ্গে যাদের কথা হতো, তাদের বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

আসিফ

×