
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে টানা তিন বছর ধরে প্রত্যাশিত রাজস্ব মিলছে না। গত অর্থবছরেও রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ২১৪ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। কমেছে পাথর ও কৃষিপণ্যের আমদানি।
বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে সারাদেশ। সরকার পতনের পর সম্পর্কের অবনতি হয় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমেও।
গত অর্থবছরে এ স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ২১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ১২ হাজার টাকা। ১ হাজার ১২২ কোটি ৪১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৯০৭ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এরমধ্যে পুরো অর্থবছরে শুধু মে মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পেরেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বাকি ১১ মাসেই ঘাটতি ছিল।
বন্দর সংশ্লিষ্টদের দাবি, অর্থবছরের শুরুতেই জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, সরকার পতন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি এবং ফল, কৃষিপণ্য, পাথর ও অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি কমায় রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে কমেছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ফলে টানা তিন বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমেছে ফল আমদানি। এছাড়াও কমেছে কৃষিপণ্য, গোখাদ্য ও পাথর আমদানি। পুরো অর্থবছর জুড়েই ছিল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। এমনকি দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি, ডলার সংকটে চাহিদামতো পণ্যের অর্ডার দিতে না পারা, ব্যবসায়ীদের ভিসা না দেয়া ও অবকাঠামোগত সমস্যায় সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গতি কমেছে আমদানি-রফতানিতে। এমনকি পাথর ছাড়া অন্য পণ্য আমদানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির কারণে সকল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মুখ থুবড়ে পড়েছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর।
আমদানিকারক তরিকুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকট থাকায় এলসি করতে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে বিগত অর্থবছরে। এছাড়াও দুই দেশের সরকারের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক ছিল না। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করা যায়, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় গেলে আবারো আগের মতো আমদানি-রফতানিতে গতি ফিরবে।
আরেক আমদানিকারক আরিফুর রহমান বলেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের ঠিকমতো এলসি দিতে পারেনি। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ছাড়া যেসব পণ্যের ওপর অধিক শুল্ক রয়েছে এমন পণ্যের কোনো এলসি দিতে পারেনি ব্যাংক। যার কারণে ওসব পণ্য বন্দর দিয়ে তেমন একটা আমদানি হয়নি। যার কারণে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বর্তমান সরকারের আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগের কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে বলে দাবি কাস্টমস কর্মকর্তাদের। সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নুরুল হাসান নোবেল জানান, আলু-পেঁয়াজ ও গুড়সহ কৃষিপণ্য না আসায় রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। এছাড়াও রাজস্ব আদায় বেশি হওয়া মানে আমাদের দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাওয়া। চলতি বছর দেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে ছিল। ফলে তা আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। এতেই রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৪১৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
মিরাজ খান