ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

রক্তের ফোঁটায় জীবন বাঁচানোর লড়াই ১৬ বছর বয়সী আজমুনের

শ্যামল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোটার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

রক্তের ফোঁটায় জীবন বাঁচানোর লড়াই ১৬ বছর বয়সী আজমুনের

স্কুলের মাঠে ছুটে বেড়ানোর বয়স, এখন হাসপাতালে কাটছে রক্তের অপেক্ষায়। সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙা এলাকার ১৬ বছর বয়সী আজমুন নাহারের থ্যালাসেমিয়া নামক জটিল রক্তরোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিন গুনছেন। 

এই বয়সে যেখানে তার সময় কাটার কথা পাঠশালায় বন্ধুদের সঙ্গে, সেখানে সে প্রতি মাসে রক্ত নিতে ছুটছে হাসপাতালে। প্রতি মাসেই তার শরীরে দিতে হয় অন্তত দুই ব্যাগ রক্ত। সঙ্গে রয়েছে ওষুধ ও নিয়মিত চিকিৎসার খরচ।

আজমুনের বাবা মো. আবুল খায়ের পাটোয়ারী এক সময় ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ক্ষুদ্র ব্যবসা করলেও গত এক বছর ধরে তিনি গ্রামের একটি ছোট চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। দোকান থেকে মাসে যা আয় হয় তাদিয়ে কোনো রকম খাওয়া খরচ চলে যায়, এর মধ্যে ভাড়া বাসা বাবদ লাগে চার হাজার টাকা। এতে সাংসার  চালাতে খেতে হচ্ছে হিমসিম, তারমধ্যে মেয়ের চিকিৎসা, রক্ত জোগাড় ও ওষুধের খরচ। চিকিৎসকদের মতে, একটি জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আজমুনের দেহে রক্তের চাহিদা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এই অপারেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় আড়াই লাখ টাকা, যা এই নিম্নআয়ের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও শত কষ্টের মাঝেও তার বাবা চালিয়ে যাচ্ছেন আজমুনের পড়াশোনার খরচ। বাবা-মা চাইলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে মেয়েকে স্কুলে পাঠানো কিংবা নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। 

আজমুনের বাবা বলেন, গত ১২ বছর ধরে মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। এমতাবস্থায় ওর পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার পথে। এদিকে মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমি সমাজের সবার কাছে সহযোগিতা চাই।
 
এ বিষয়ে সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন  বলেন, আজমুন নাহারের পরিবার অত্যন্ত অসহায়। মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য যে টাকার প্রয়োজন, তা তারা সংগ্রহ করতে পারছে না। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করছি। এ ব্যাপারে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা এখন জরুরি।"

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা,মোঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। এই রোগে শরীরে ত্রুটিপূর্ণ রক্তকণিকা তৈরি হয়, যা দ্রুত ভেঙে যায়। ফলে রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্পিন বড় হয়ে যায়, যা অপসারণ করলে রক্তের প্রয়োজন অনেকটাই কমে আসে।

এ বিষয়ে  সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার  (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত  বলেন, "উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা যতটা পারি সহায়তা করব। সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে অনুদানের ব্যবস্থাও করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে পড়াশোনার ব্যবস্থাও করার চেষ্টা করছি।" সমাজের সহৃদয় ও মানবিক মানুষদের ছোট্ট একটি সহায়তাই হয়তো বদলে দিতে পারে একটি জীবন।

রাজু

×