ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অবৈধ বালু উত্তোলনে নদীতে ভাঙন, হুমকিতে বসতবাড়ি 

নিজস্ব সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২১ জুলাই ২০২৫

অবৈধ বালু উত্তোলনে নদীতে ভাঙন, হুমকিতে বসতবাড়ি 

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

খরস্রোতা পাহাড়ি চেল্লাখালী নদীতে আমার বসতঘর ভাইঙ্গা গেছে গা। থাকার ঘর নাই। অহন আমি বউ পুলাপান নিয়া খুব কষ্টে আছি। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে একটা ঘর পাইলে বউ পুলাপান নিয়া শান্তিতে থাকতে পারতাম। এহন মাঝে মধ্যেই সারারাত বাইরে বসে থাকি। একদিকে নদী ভাঙ্গন অন্যদিকে বন্যহাতির অত্যাচার। এ নিয়ে আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

একবুক কষ্ট নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী বাজার সংলগ্ন চেল্লাখালী নদী তীরবর্তী বাতকুচি পুরাতন ফরেস্ট এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মো. আয়নাল হক। তিনি দীর্ঘদিন যাবত চেল্লাখালী নদীরপাড়ে বসবাস করে আসছেন। প্রতিবছর চেল্লাখালী নদীর বালু সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হলেও কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নদীর তীর ভেঙে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করেন। ফলে নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি এখন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আয়নাল হকের মতো নদী ভাঙনের ঝুঁকি নিয়ে বেশ কিছু পরিবার উপজেলার বুরুঙ্গা, বাতকুচি ও পলাশীকুড়া গ্রামে বসবাস করছেন। দরিদ্র আয়নাল স্ত্রী, সন্তান, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতিসহ ১০ জন সদস্য নিয়ে তার বাড়ির দুটি ঘরে থাকতেন। অপরিকল্পিতভাবে নদীর পাড় ভেঙে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলনের ফলে মাটি ধ্বংসে গিয়ে একটি বসতঘর ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে ধ্বংসে পড়েছে বাড়ির আঙ্গিনার ফলজ ও কাঠগাছ এবং বাঁশ বাগান। এখন একটিমাত্র ঘরে পরিবারের ১০ জন সদস্যের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই পরিবারের ৬ জন সদস্য বর্তমানে অন্যের বাড়িতে রাত্রিযাপন করছেন। অসহায় আয়নাল হক দিন মজুরি করে কোনো মতে কষ্ট করে সংসার চালান। নতুন করে একটি বসতঘর নির্মাণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে গ্রামবাসী জানান।

ভুক্তভোগী আয়নাল হক বলেন, চেল্লাখালী নদীটি চলতি বছর বালু উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু গত বছর ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরের শেষ দিকে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত নদীর পাড় ভেঙে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলন করেছে। এরফলে নদীর পাড় ভেঙে আমার বাড়ির একটি ঘর নদীতে চলে গেছে। বাকি একটি ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে প্রবল বেগে নদীতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। আবার যদি এই নদী নতুন করে ইজারা দেওয়া হয় তাহলে নদীর তীরের মানুষ আর বাড়িতে থাকতে পারবে না। বেশির ভাগ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পরিবারের ১০ জন সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে বসত-ভিটায় বসবাস করে আসছি। আমি যদি একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে একটি বসতঘর পেতাম তাহলে স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম।

তিনি আরো জানান, নদী তীরবর্তী বাতকুচি ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন গ্রামটি পাহাড়ঘেঁষা। এ গ্রামে প্রায় সময়ই বন্যহাতি তাণ্ডব চালায়। যখন বন্যহাতির উপদ্রব বেড়ে যায় তখন ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে সারারাত বাইরে বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। একদিকে নদী ভাঙন আরেকদিকে বন্যহাতির অত্যাচার। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। তাই সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে একটি বসতঘর প্রাপ্তির দাবি জানাচ্ছি।

মিরাজ খান

×