ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত!

মীর মোহাম্মদ জসিম

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২২ জুলাই ২০২৫

মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত!

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হৃদয়বিদারক ট্রাজেডির জন্ম দিয়েছে। নিহত হয়েছেন ১৯ জন, আহত শতাধিক। হাসপাতালজুড়ে কান্নার রোল, উদ্বিগ্ন স্বজনদের ছুটে চলা আর বাতাসে ঘোরে আতঙ্ক ও বেদনার গন্ধ।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরপরই সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে দগ্ধদের জন্য রক্তের যোগান। আর সেই সংকট মোকাবিলায় রাজধানীবাসী দেখিয়েছে অনন্য মানবিকতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রক্তের আহ্বান ছড়িয়ে পড়তেই বার্ন ইউনিটের সামনে ভিড় জমায় শত শত মানুষ—হাতে প্ল্যাকার্ড, বুকভরা সাহস আর রক্ত দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়।

কেউ এসেছেন অফিস ফেলে, কেউ পরিবার ফেলে; অনেক নারীরাও এগিয়ে এসেছেন নিজেদের লাল ভালোবাসা নিয়ে। কেউ দাঁড়িয়ে আছেন খাবার নিয়ে, কেউ আবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আশার বার্তা হয়ে।

"আমার সামান্য রক্ত যদি কারো কাজে আসে, সেটাই আমার সৌভাগ্য,"—বলেছেন কামাল উদ্দিন, যিনি অফিসের কাজ রেখে এসেছেন রক্ত দিতে।
ভোলা থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন মুন্নার কণ্ঠে তীব্র আবেগ, "স্বজনদের আহাজারি দেখে আর বসে থাকতে পারিনি।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনজুম জানালেন, "আমি শুধু এসেছি না, অন্যদেরও আহ্বান জানিয়েছি। এখন শুধু রক্ত নয়, দরকার ভালোবাসা ও সহানুভূতির।"

শুধু সাধারণ মানুষ নন, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মীরাও ময়দানে নেমেছেন।
ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আহতদের সেবায়, রক্ত সংগ্রহে ও উদ্ধার কার্যক্রমে সক্রিয়।

নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট বেশি, এজন্য সংগঠনগুলো বিশেষভাবে এদিকে নজর দিয়েছে। ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শিপন জানান, "পজেটিভ রক্ত অনেক পাওয়া যাচ্ছে, তবে নেগেটিভ রক্তের জন্য আমরা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে খুঁজে যাচ্ছি।"

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, "ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছি। রক্ত যেন কারো অভাব না হয়, সেটাই এখন মূল লক্ষ্য।"

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে রক্তদান ও সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন। একটি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে আহতদের সেবায়। দলের পক্ষ থেকে দ্রুত রেসপন্স টিম, অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে দুটি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
এছাড়া রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য টিম সদস্যদের নম্বরও প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, "২৫ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রচুর রক্ত প্রয়োজন। সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।"

রক্ত প্রয়োজন এমন হাসপাতালগুলো হলো:

  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিট

  • উত্তরা বাংলাদেশ মেডিকেল

  • উত্তরা আধুনিক মেডিকেল

  • কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

  • কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল

  • মনসুর আলী মেডিকেল

  • উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের বার্তা, "উত্তরার বাইরে কেউ ভিড় করবেন না। স্থানীয় ভলান্টিয়াররা কাজে নেমে পড়ুন। রাস্তাঘাট সচল রাখুন, রক্তদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করুন। রক্তই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন।"

এক ভয়াবহ ট্রাজেডির মুখে দাঁড়িয়ে দেশবাসী আবারও প্রমাণ করলো—এই জাতি কেবল কান্নায় ভেঙে পড়ে না, বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযাত্রিতায় গড়ে তোলে একটি শক্তিশালী মানবিক প্রতিরোধ।

আসিফ

×