
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলগ্রহ এক সময় পৃথিবীর মতোই বৃষ্টিময় ছিল—এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা। নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, প্রাচীন নদীর পলিতে গঠিত বিপুল এক নেটওয়ার্ক বা কাঠামো মঙ্গলে বৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রমাণ দেয়। এ নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ১৪,৪৮৪ কিলোমিটারেরও বেশি।
যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যাডাম লোসেকুটের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় উঠে এসেছে, মঙ্গলের দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াকিস টেরা (Noachis Terra) এলাকায় প্রাচীন ‘ইনভার্টেড চ্যানেলস’ বা উঁচু নদীখাতের অস্তিত্ব, যা দীর্ঘ সময় ধরে সেদেশে পানি প্রবাহের সাক্ষ্য বহন করে।
লোসেকুট বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণা মঙ্গলের অতীত সম্পর্কে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি দেখায়, গ্রহটি এক সময় অনেক বেশি সক্রিয় ও জটিল ছিল। এটি নিয়ে কাজ করতে পারাটা দারুণ রোমাঞ্চকর।’
মঙ্গলে প্রাচীন নদীখাতের রহস্য
১৯৭০-এর দশকে ‘ম্যারিনার ৯’ মহাকাশযানের পাঠানো চিত্র থেকেই প্রথম ধারণা পাওয়া যায় যে, মঙ্গল এক সময় পানিপূর্ণ ছিল। কিন্তু শুধু ভূমিতে নদীখাত কাটা থাকার প্রমাণই নয়, আজকের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে—বৃষ্টির পানি বা হিমবৃষ্টির মাধ্যমে জমে থাকা পলি যুগের পর যুগ ধরে শক্ত পাথরে পরিণত হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে নদীর পানি ও পার্শ্ববর্তী ভূমি ক্ষয়ে গেলে, সেগুলোই এখন মঙ্গলের বুকে উঁচু খাত বা ইনভার্টেড চ্যানেলের মতো দেখা যাচ্ছে।
নোয়াকিস টেরায় নতুন আবিষ্কার
নোয়াকিস টেরা এতদিন বিজ্ঞানীদের তেমন আগ্রহ জাগায়নি, কারণ এতে প্রচলিত নদীখাতের মতো গঠন দেখা যায় না। কিন্তু নতুন চিত্র ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখানে এক বিশাল নেটওয়ার্কে সাজানো ইনভার্টেড চ্যানেল রয়েছে, যা একসময়ে প্রচুর পানি প্রবাহের প্রমাণ দেয়।
এই নেটওয়ার্ক গঠন হয়েছে মূলত নোয়াকিয়ান-হেস্পেরিয়ান যুগান্তরের সময়, প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে। গবেষকেরা মনে করছেন, এ সময় মঙ্গলের জলবায়ু ছিল অনেক বেশি উষ্ণ ও আর্দ্র।
এলিয়েন থাকলে দরকার হতো ছাতা!
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো—এই নদীগুলো হঠাৎ বন্যা বা বরফ গলার ফলে নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাতের ফলেই গঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। অর্থাৎ, মঙ্গলের সেই যুগে নিয়মিত বৃষ্টি হতো। যদি তখন মঙ্গলে এলিয়েন থাকত, তবে তাদের ছাতা ছাড়া উপায় থাকত না!
অ্যাডাম লোসেকুট এই গবেষণা উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির জাতীয় সম্মেলনে (৭–১১ জুলাই)।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব