ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সুইদা থেকে বেদুইনদের সরিয়ে নিচ্ছে সিরীয় সরকার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২২ জুলাই ২০২৫

সুইদা থেকে বেদুইনদের সরিয়ে নিচ্ছে সিরীয় সরকার

ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুইদায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে এখন টালমাটাল এক শান্তিচুক্তির আওতায় বেদুইন সম্প্রদায়ের মানুষদের সরিয়ে নিচ্ছে দেশটির সরকার। সোমবার (২১ জুলাই) প্রথম দফায় ১০টি বাসে ৫০০ বেদুইন পরিবারকে নিরাপদে দারা অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়। সিরীয় আরব রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স ও সহায়ক গাড়ি এই সরিয়ে নেওয়ার কাজ তদারকি করে।

এই সংঘর্ষে ১৩ জুলাই থেকে শুরু হয়ে প্রায় ২৬০ জন নিহত হয়েছে এবং ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা। সুইদার সাতটি এলাকায় বসবাসকারী বেদুইনরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং অনেকেই স্বেচ্ছায় ওই অঞ্চল ত্যাগ করছেন।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ আল-দালাতি জানিয়েছেন, শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সুইদা শহরের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পুনর্বাসন ও পুনর্মিলনের পথ তৈরি হবে বলে আশা করছেন তিনি। একই সঙ্গে সুইদা থেকে বিতাড়িত ড্রুজ পরিবারগুলোকে ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, সংঘর্ষ নিরসনে শনিবার একটি অস্ত্রবিরতির সমঝোতা হয়, যেখানে বলা হয় বেদুইন যোদ্ধারা যেসব ড্রুজ নারীকে আটক রেখেছে তাদের মুক্তি দেবে এবং প্রদেশ ত্যাগ করবে। তবে বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় রবিবার রাতে কিছু এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার শব্দ শোনা যায় বলে জানায় পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টরা। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব হামলার বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এই সংঘাতে ইসরায়েলও জড়িয়ে পড়েছে। তারা দাবি করেছে, ড্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে গিয়ে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সুইদা প্রদেশেও তারা হামলা চালিয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, সিরিয়ার ২,৫০০ হালকা অস্ত্রধারী সরকারি বাহিনীকে সুইদা শহরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া জর্ডানে একটি টেকসই অস্ত্রবিরতির উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক আলোচনার আয়োজন চলছে।

অন্যদিকে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ড্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তির পথে ফিরে আসতে। তিনি ড্রুজ আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমাত আল-হিজরির অনুসারীদের ওপর দোষারোপ করে বলেছেন, তারা সংঘর্ষ উসকে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, সুইদায় প্রথম দফায় খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি নিয়ে রেড ক্রিসেন্টের একটি ত্রাণবহর পৌঁছেছে।

ড্রুজরা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ করে সুইদা (Sweida) প্রদেশে ঘনবসতিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তারা একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা নিজেদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করে চলে।

বেদুইনরা সিরিয়ার মরুপ্রধান অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা আরব যাযাবর জনগোষ্ঠী, যারা মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং পশুপালন ও মরুভূমিভিত্তিক জীবনে অভ্যস্ত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময়, ড্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে ভূমি, নিরাপত্তা ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে কিছু সংঘর্ষ এবং উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে সুইদা ও তার আশপাশের এলাকায়।

মুমু ২

×