
ছবি: সংগৃহীত
একটা রাত খারাপ ঘুমের পর ক্লান্তভাবে ঘুম থেকে ওঠা পুরো দিনের জন্য একটি বাজে শুরু হতে পারে। তখন অনেকেরই প্রথম প্রবণতা হয় কফির কাপ হাতে নেওয়া বা বারবার ‘স্নুজ’ চাপা। অথচ ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস আপনার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এক রাত ঘুম কম হওয়ার পর সকালে আপনি যেভাবে নিজের দিন শুরু করবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে আপনি সারাদিন কতটা ভালো থাকবেন—না হলে আরও ক্লান্ত ও অস্থির অনুভব করবেন। ঘুমের ঋণের ফাঁদে পড়ে না যেতে চাইলে জেগে ওঠার পর থেকেই সচেতনভাবে কিছু ভুল এড়িয়ে চলা জরুরি।
বারবার স্নুজ বাটন চাপবেন না
যদিও কয়েক মিনিট অতিরিক্ত ঘুম আরামদায়ক মনে হয়, বাস্তবে এটি আপনার ঘুম আরও বিঘ্নিত করে। ঘুম বিশেষজ্ঞ র্যাচেল বিয়ার্ড বলেন, “স্নুজ করা আপনাকে আরও বেশি ক্লান্ত করে তোলে।” কারণ প্রতিবার স্নুজের পর আপনি যে অল্প সময় ঘুমান, তা পর্যাপ্ত গভীর হয় না, ফলে আপনি আরও বেশি অবসন্ন বোধ করেন।
দিন শুরু করুন পানি দিয়ে, কফি দিয়ে নয়
ঘুমের ঘাটতি আপনার শরীরে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়, যা আরও ক্লান্তি ও মানসিক অস্বচ্ছতা ডেকে আনে। পুষ্টিবিদরা দিনের শুরুতে এক গ্লাস পরিমাণমতো পানি পান করার পরামর্শ দেন। চাইলে এতে ইলেকট্রোলাইট মিশিয়েও নিতে পারেন। মাত্র ২% পানিশূন্যতা আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে, যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যে রোদে যান
প্রাকৃতিক আলো আপনার শরীরের ঘুম-জাগরণ চক্র পুনরায় ঠিক করতে অত্যন্ত কার্যকর। ঘুম থেকে ওঠার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাইরে রোদে দাঁড়ান। সূর্যের আলো মেলাটোনিন (ঘুম হরমোন) হ্রাস করে ও সেরোটোনিন (উদ্দীপনামূলক হরমোন) বাড়ায়, ফলে আপনি বেশি সতেজ ও ইতিবাচক অনুভব করবেন। এটি রাতের ঘুমও উন্নত করতে সাহায্য করে।
কফি একটু দেরিতে পান করুন
কফি খাওয়া যাবে—তবে ঘুম থেকে ওঠার প্রায় ৯০ মিনিট পর। কারণ এই সময়ের মধ্যে আপনার শরীর স্বাভাবিকভাবে কর্টিসল নিঃসরণ করে, যা আপনাকে জাগিয়ে তোলে। খুব তাড়াতাড়ি কফি খেলে এই প্রাকৃতিক জাগরণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। বরং সকালের নাশতার পর কফি খেলে তা বেশি কার্যকর এবং অতিরিক্ত উদ্বেগ বা হঠাৎ শক্তি পতনও রোধ করে।
হালকা শারীরিক অনুশীলন করুন, কঠিন নয়
একটি ছোট হাঁটাহাঁটি বা হালকা যোগব্যায়াম আপনার মেজাজ উন্নত করতে এবং ঘুমঘোর কাটাতে সাহায্য করে। তবে এই সময় ভারী শরীরচর্চা এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ইতিমধ্যেই ক্লান্ত শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। র্যাচেল বিয়ার্ড বলেন, “এটা শক্তি বাড়ানোর জন্য, শেষ করে দেওয়ার জন্য নয়।”
প্রয়োজনে একটি ছোট ঘুম দিন
যদি দুপুরের পরও আপনি অস্থিরতা অনুভব করেন, তবে দুপুর ২টার আগেই ২০ মিনিটের একটি হালকা ঘুম নিতে পারেন। তবে খুব বেশি বা দেরিতে ঘুমালে রাতে ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে। তাই নির্ধারিত সময়ের বেশি না ঘুমিয়ে সতেজ ঘুম নিশ্চিত করতে অ্যালার্ম সেট করে নিন।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে দিন শুরু করুন
ঘুম কম হলে অনেকেই মিষ্টি বা চিনি-যুক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকেন, কিন্তু এতে শক্তি অল্প সময়েই পড়ে যায়। বরং দিন শুরু করুন ডিম বা গ্রীক দইয়ের মতো উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে। প্রোটিন ডোপামিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা মনোযোগ বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়—চিনিযুক্ত খাবারের মতো হঠাৎ করে ধসে পড়ে না।
আপনার নিয়মিত ঘুমের সময়েই ঘুমান
একটু আগে ঘুমানোর লোভ হলেও, অতিরিক্ত আগেভাগে ঘুমাতে যাওয়া আপনার ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ আরও বিঘ্নিত করতে পারে। বরং রাতের ঘুমের আগে কিছু শান্তিময় কার্যকলাপ করুন—যেমন বই পড়া, হালকা স্ট্রেচিং ইত্যাদি—এবং পরের রাতে আপনার স্বাভাবিক ঘুমের রুটিনে ফিরে আসার চেষ্টা করুন।
আবির