
মালয়েশিয়ায় বহু ধর্ম ও জাতির মানুষ গড়ে তুলেছে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় দেশ,। যেখানে মালয়, চাইনিজ, ভারতীয়, ইবান, কাদাযানসহ প্রায় ৩০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছে। ভাষা, ধর্ম আর সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যের মাঝেও এখানে রয়েছে এক অনন্য সামাজিক সম্প্রীতি। এই সহাবস্থান শুধু মালয়েশিয়ার ইতিহাস নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্যও এক গর্বের অধ্যায়।
মালয়েশিয়ার সরকারি ধর্ম ইসলাম হলেও এখানে খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও তাও ধর্মের অনুসারীরাও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালন করে থাকেন। মালয় জনগোষ্ঠী প্রধানত মুসলিম, চাইনিজরা বেশিরভাগ বৌদ্ধ, কনফুসিয়ান ও খ্রিস্টান, আর ভারতীয়রা হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এছাড়া সাবাহ ও সারাওয়াক রাজ্যে রয়েছে আদিবাসী খ্রিস্টান ও অ্যানিমিজম বিশ্বাসী গোষ্ঠী।
রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরের মধ্যে একই রাস্তায় দেখা যায় মসজিদ, হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও গির্জা। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করলেও একে অপরের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ধর্মীয় উৎসবের সময় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং প্রতিবেশীরা একে অন্যকে আমন্ত্রণ জানায়। উদাহরণস্বরূপ, ঈদুল ফিতর, দীপাবলি, চাইনিজ নিউ ইয়ার ও ক্রিসমাস—সব উৎসবেই মালয়েশিয়ার মানুষ একসাথে আনন্দ ভাগ করে নেয়।
খাবারেও রয়েছে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। নাসি লেমাক, রোটি চানাই, লাক্সা, চার কুই তাও ও স্যাম্বল বেলাচান সবই এই মাটির ঐতিহ্য। ভারতীয়, চাইনিজ ও মালয় খাবারের এমন মিশ্রণ পৃথিবীর খুব কম দেশেই দেখা যায়।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব জাতির শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়ালেখা করে। বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও জাতীয় ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয় পাঠ্যপুস্তক ও কার্যক্রমে। অফিস-আদালত, দোকানপাট, পরিবহন কিংবা হাসপাতাল সবখানেই মানুষ জাতি-ধর্ম ভুলে একে অপরের সহযাত্রী।
মালয়েশিয়ার সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। সরকার ১ মালয়েশিয়া নীতির মাধ্যমে সব জাতি ও ধর্মের মানুষকে সমান সুযোগ ও মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, বহুসাংস্কৃতিক কর্মসূচি এবং সম্প্রীতি দিবস পালনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
বিশ্ব যখন ধর্ম-বর্ণের বিভাজনে টালমাটাল তখন মালয়েশিয়া নিজের ভেতরের বৈচিত্র্যকে শক্তি হিসেবে গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানে মানুষ একে অপরের ভিন্নতা স্বীকার করে, সম্মান করে এবং একসাথে আগায়।
এই সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মালয়েশিয়াকে একটি মানবিক, আধুনিক এবং উদার রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।
তাসমিম