
সংগৃহীত
তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে অভাবনীয় অগ্রগতি এনেছে। কিন্তু এই অগ্রগতির অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে যে সংকট তৈরি হচ্ছে, তা হলো ডিজিটাল নির্ভরতা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দিনকে দিন যেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে, তাতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে পরিবার, সমাজ ও বিশেষজ্ঞ মহলে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা সময় চলে যায় স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহারে। এটি শুধু সময়ের অপচয় নয়, বরং মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, অনিদ্রা, মনোযোগে ঘাটতি, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং বিষণ্নতা তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিমাত্রায় সক্রিয়তা তরুণদের ‘ভার্চুয়াল পরিচয়’ নির্ভর করে তুলছে। বাস্তবের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠার সুযোগ যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নানা মানসিক চাপে ভুগছে তারা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের মধ্যে মোবাইল বা গেমিং অ্যাডিকশন এখন একটি বাস্তব সমস্যা। অনেকেই রাতে ঘুম না দিয়ে ফোনে সময় কাটায়, যার ফলে শরীর ও মনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়ে। যে-সব অভিভাবক এই সমস্যা খেয়াল করেন না বা গুরুত্ব দেন না, তারা অজান্তেই সন্তানের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
সমাধান কোথায়? প্রথমেই পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানের সঙ্গে আন্তরিক ও বিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক রাখতে হবে, যাতে তারা মানসিক যেকোনো সংকটে খোলামেলা কথা বলতে পারে। অভিভাবকদের উচিত মোবাইল ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং অফলাইন পারিবারিক সময় বাড়ানো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।
সরকারি পর্যায়েও ডিজিটাল লিটারেসি ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জাতীয় পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালু করা দরকার। তরুণদের জন্য সৃজনশীল বিকল্প কার্যক্রম যেমন খেলাধুলা, বই পড়া, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদিকে উৎসাহিত করতে হবে।
তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। যদি তারা ভারসাম্যহীন প্রযুক্তি নির্ভরতায় নিজেদের হারিয়ে ফেলে, তবে শুধু ব্যক্তি নয়—সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রও ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই এখনই সময় এ বিষয়ে সম্মিলিত সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
হ্যাপী