
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের হাতে মোবাইল কিংবা ট্যাব থাকা যেন সাধারণ চিত্র হয়ে উঠেছে। অনেক অভিভাবকই ভাবেন, মোবাইল বা টিভির পর্দায় প্রিয় কার্টুন দেখাতে দেখাতে সন্তানকে খাওয়ানো সহজ ও কার্যকর একটি পদ্ধতি। তবে চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, জন্ম থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের একেবারেই স্ক্রিন থেকে দূরে রাখা উচিত। এই বয়সে শিশুদের শেখার প্রধান মাধ্যম হলো দেখা, শোনা ও স্পর্শ করা। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর ঘুম, মনোযোগ ও ভাষা বিকাশে ব্যাঘাত ঘটায়।
স্ক্রিন টাইমের সীমা ও প্রভাব
আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের সুপারিশ অনুযায়ী, দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের স্ক্রিন টাইম দৈনিক সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা হওয়া উচিত। তবে তা যেন শিশুর ঘুম ও খেলাধুলার সময়ের ক্ষতি না করে, সেটিও মাথায় রাখা জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে থাকা স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে মনোযোগহীনতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা এবং আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। তাদের ঘুমের সময় কমে যায়, ফলে মেজাজ হয়ে পড়ে খিটখিটে। দীর্ঘমেয়াদে পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি ও ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
শারীরিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও কম নয়
স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটানো শিশুরা অনেক সময় খাওয়ার স্বাদ বা পরিমাণ বুঝে উঠতে পারে না। এতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় এবং তা থেকে শিশুর স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে। সেই সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় শরীরচর্চার সুযোগও হারিয়ে যায়।
প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট নুজহাত ই রহমান বলেন, “মোবাইল বা ট্যাবের অতিরিক্ত ব্যবহারে শিশুর ঘুম, বিশ্রাম এবং খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা দেখা দেয়। এতে ভাষা বিকাশ ব্যাহত হয়, মনোযোগ কমে যায় এবং সামাজিক মেলামেশার আগ্রহও হারিয়ে ফেলে।”
শুধু সময় নয়, খেয়াল রাখতে হবে কনটেন্টেও
শিশুরা স্ক্রিনে কী দেখছে—এটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সহিংসতা বা অবাস্তব কনটেন্ট শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। বাস্তব জীবনে তারা সেই আচরণ অনুকরণ করতে শুরু করে, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
সমাধানে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিন একেবারে নিষিদ্ধ না করে বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই হতে পারে কার্যকর সমাধান। বাবা-মায়ের উচিত শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো, বাস্তব খেলা, বই পড়া, গল্প শোনানো ইত্যাদির মাধ্যমে বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
শিশুকে স্ক্রিন থেকে দূরে রাখতে অভিভাবকদের নিজেদের আচরণেও সচেতন হতে হবে। নিজের স্ক্রিন টাইম সীমিত রেখে তার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে শিশু সহজেই তা অনুসরণ করতে পারে।
স্ক্রিন-নির্ভর অভ্যাস শিশুর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখিয়ে, ভালো অভ্যাস গড়ে তুলেই ভবিষ্যতের জন্য একজন সুস্থ, সচেতন এবং মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন পরিবার থেকেই সচেতনতা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
নোভা