ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অল্পবয়সে গর্ভধারণ

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২১ জুলাই ২০২৫

অল্পবয়সে গর্ভধারণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে কিশোরীদের মা হওয়ার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির নাম ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২’। প্রথমে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মা হন। এই সংখ্যা হাজারে একজনের কম (শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ)।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮ বছরের আগে কিশোরীদের বিয়ের হার ২০১৮ সালে ছিল ৩০। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এই সময়ে কিশোরী বিয়ের হার ১০ দশমিক ৯ বেড়েছে। অন্যদিকে ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের বিয়ের হার ২০১৮ সালে ছিল ৪ দশমিক ৬। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। শত বছর আগে দেশে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি ছিল। সামাজিক চাপে তখন ১৫-১৬ বছর বয়সেই বহু কিশোরী মা হতো। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানমতে ১৮ বছর বয়সের আগে একটি মেয়ে বিয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয় না। তার শরীর বিয়ে ও গর্ভধারণের জন্য তৈরি হয় না। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন ওবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি কিশোর বয়সে গর্ভে সন্তান ধারণের মানে হলো- ‘শিশুর গর্ভে শিশু’- এমন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা মা ও শিশু কারও জন্যই ভালো নয়। এই বয়সে মা হলে প্রসবজনিত নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। বাধাগ্রস্ত প্রসব, অপরিণত শিশু প্রসব হয়। মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। তাছাড়া এই কিশোরী মায়েদের কোনো যত্নই পরিবারে হয় না। 
কিশোরীদের মা হওয়া রোধে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা চাই। এজন্য অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরি। সেই সঙ্গে বদলাতে হবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাল্যবিয়ের অভিশাপমুক্ত হতে হলে এর কুফলগুলো জনগণকে জানানো সঙ্গত। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
বর্তমানে সামাজিক চাপ নেই অল্পবয়সে বিয়ে দেয়ার। তবে গরিব পরিবারে মেয়ের ভরণপোষণে অপরাগতা থেকে আগেভাগে বিয়ে দিয়ে মেয়েকে বিদায় করার প্রবণতা অস্বীকার করা যাবে না। বাল্যবিয়ে রোধে নিবিড় মনিটরিং জরুরি, দুস্থ পরিবারের মেয়েশিশুর জন্য বিশেষ আর্থিক  কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ওই পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচন করা গেলে কিশোরীদের মা হয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। এটা ঠিক যে, বাল্যবিয়ে, কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের বিষয়টি শুধু সরকারি পদক্ষেপের মাধ্যমে রোধ করা যাবে না। সমাজের প্রত্যেকেরই এখানে ভূমিকা আছে। বাল্যবিয়ে ও কিশোরী বয়সে মা হওয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশের উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখার মতো প্রজন্ম তৈরি করা যাবে না।

প্যানেল/মো.

×