
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ আনন্দ-বিনোদন কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে, প্রাকৃতিক পরিবেশে জনাকীর্ণ জায়গা খুঁজে নেয়। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততাপূর্ণ সময় থেকে বাঁচতে এক চিলতে নীরবতা খুঁজে নেয়। মানুষের পছন্দ পাহাড়, নদী-খাল-বিল, ঝর্ণা, লেক, সমুদ্র এবং প্রাকৃতিক বন-বনানী। পর্যটনের এই উপাদনগুলোর সবই আছে আমাদের বাংলাদেশে, যা প্রকৃতি প্রদত্ত উদার উপহার।
দেশের নাগরিকদের যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বিদেশের মাটিতে অবকাশ কাটাতে যান এবং যারা সক্ষম নন তারা দেশের নানা প্রান্তে বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে ছোটেন। অবসর সময় কাটান, এতে মানুষের মন, মগজ-মস্তিস্ক প্রশান্তির ফল্গুধারায় সিক্ত হয়, নতুন কর্মোদ্দীপনা তৈরি হয়, মানুষের সৃজনশীলতা আরও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নানা প্রান্তে ঘোষিত এবং অঘোষিত মিলে কয়েক হাজার পর্যটন স্পট রয়েছে। যে স্থানগুলোতে প্রতিদিন লাখো পর্যটক ঘুরতে যান। কিছু জায়গায় বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও দেখা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতায় মানুষ খুব সহজেই খুঁজে পায় তাদের কাক্সিক্ষত পর্যটন স্পট। সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটগুলোতে খেয়ালখুশিমতো, যত্রতত্র অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। দেশের ভৌগোলিক স্থিতি স্থাপনে পাহাড় হলো রক্ষা কবচ, পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটন বিস্তার পাহাড় ধ্বসকে আরো তরান্বিত করবে।
অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে কিংবা পাদদেশে এসব রিসোর্ট নির্মাণ করতে গিয়ে পাহাড়ধস ও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় হ্রদ কাপ্তাইকে ঘিরে গড়ে উঠছে কমপক্ষে ১৫টি রিসোর্ট বা অবকাশকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদীর পাশে রয়েছে পাঁচটি। অধিকাংশের নেই কোনো সরকারি অনুমোদন। পাহাড়ে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কোনো অনুমোদন।
শুধু রাঙ্গামাটি সদর ও আশপাশের উপজেলায় কী পরিমাণ অবকাশ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তার সুনির্দিষ্ট তালিকাও নেই রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। তাহলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ কী? শুধু কাপ্তাই হ্রদ নয়, কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোও নিয়মনীতি মানছে না। এভাবে ‘যত্রতত্র রিসোর্ট নির্মাণের ফলে, হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
চলতি বছর ২৪ মার্চ পার্বত্য জেলা পরিষদের এক নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, সাজেকসহ বিভিন্ন এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভবন ও পর্যটন স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। পরিষদের অনুমোদন ছাড়া পর্যটনসংশ্লিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন এবং বিধিমালা অনুযায়ী, দেশের যে কোনো প্রান্তে রিসোর্ট, রেস্টহাউস, গেস্টহাউস, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ করতে হলে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু আমরা রাঙ্গামাটিতে দেখতে পাচ্ছি, অধিকাংশ পর্যটন ব্যবসায়ী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখাচ্ছেন! কোন খুঁটির জোরে, তারা আইনকে তোয়াক্কা করছেন না, রাষ্ট্রের ভূ-আঞ্চলিক স্বার্থে তা খতিয়ে দেখা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায় আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
প্যানেল/মো.