ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আগেরদিন মাঠে খেলেছিল সাজিদ, ময়নাতদন্তে মিললো আনুমানিক মৃত্যুর সময়

আজাহারুল ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:৫২, ২১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:০১, ২১ জুলাই ২০২৫

আগেরদিন মাঠে খেলেছিল সাজিদ, ময়নাতদন্তে মিললো আনুমানিক মৃত্যুর সময়

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুরে ভেসে উঠে সাজিদ আবদুল্লাহর লাশ। এই নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে নানা আলোচনা। তার এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করছেন অনেকেই। কেউ আবার স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে বলেও মনে করছেন। এদিকে লাশ উদ্ধারের আগের দিনে (বুধবার) ওই শিক্ষার্থীকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। খেলা শেষে সাজিদ একদিকে এবং অন্য শিক্ষার্থীরা মেসে চলে যান বলে জানান। খেলার একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। একইদিনে বিকাল সাড়ে ৩ টার পর ক্যাম্পাসের জিয়া মোড়ে তাকে দেখা গেছে এবং ভেজা কাপড়ে ছিল বলে জানান দোকানদার আলিম। এরপর আর তাকে দেখার বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

এদিকে ময়নাতদন্তের আনুমানিক ৩০ ঘন্টা আগে সাজিদ মৃত্যুবরণ করেছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ময়নাতদন্ত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টায় করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৃতদেহের সংরক্ষিত অঙ্গের রাসায়নিক বা বিষতাত্বিক পরীক্ষার ফলাফল (ভিসেরা রিপোর্ট) না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের সময় থেকে আনুমানিক ৩০ ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রুমন রহমান জানান, ভিসেরা রিপোর্ট এলে বিষয়টির প্রকৃত ঘটনা ও সময় সম্পর্কে আরো অনেকাংশে জানা যাবে।

এদিকে বিকেলে সাজিদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কে ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে বিকেল কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহগামী ক্যাম্পাসের বিকেলের ট্রিপের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস আটকে পড়ে। তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনও। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।

তাদের উল্লেখযোগ্য দাবিসমূহ হলো পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো, বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা দায়ের, ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ন্যুনতম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, ক্যাম্পাসের সবজায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে প্রশাসনের ক্ষমা চাওয়া এবং ভিসেরা রিপোর্ট দ্রুততম সময়ে প্রদানের তাগিদ দেওয়া। এসময় দাবি না মানলে ক্যাম্পাস কমপ্লিট শাটডাউনের হুঁশিয়ারি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান এবং মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও দোকানদার আব্দুল আলিম বলেন, বুধবারে (১৬ জুলাই) বৃষ্টি থামলে আমি বিকেল সাড়ে তিনটার পর দোকান খুলি। এর কিছুক্ষণ পর দেখি সাজিদ সাদ্দাম হলের সামনের রাস্তা দিয়ে জিয়া মোড়ের দিকে আসছিল। তার সাথে আমার সর্বশেষ কথা হয়েছিল সেখানে। সে একাই ছিল। পরে কোনদিকে গেছে আমি আর জানি না। আমি দোকানের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওইদিন তাকে যে কাপড়ে দেখেছি। লাশ তোলার পর তার গায়ে একই পোশাক দেখা গেছে।

মাঠে খেলার সময়ে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা মাঠে একসঙ্গে খেলেছি। খেলার পর আমরা মেসে চলে আসি। রুমে এসে দেখি সাড়ে ৪টা বাজে।

সমাজ কল্যাণ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, যেদিন লাশ ভেসে উঠে তার আগের রাত ১১টার দিকে আমরা কয়েকজন বন্ধু পুকুরপাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে একজোড়া জুতা দেখতে পেয়েছিলাম। লাশ ভেসে উঠার দিন জানতে পারি সেগুলো সাজিদের জুতা ছিল।

আন্দোলনের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমরা তদন্তের অগ্রগতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে এবং উপ-উপাচার্যের সঙ্গে বসার জন্য বললেও তারা সাড়া দেয়নি।

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। অতি দ্রুত সঠিক কারণ উদঘাটন করতে পারবো বলে আশা করি। যেহেতু তার বাবা একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই এ বিষয়ে পুনরায় মামলা করার পরিকল্পনা নেই। আমরা তার পরিবারের করা মামলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।

 

রাজু

আরো পড়ুন  

×