ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বজুড়ে ‘সেক্সটর্শন’-এর অস্ত্র হয়ে উঠছে এআই, প্রাণ দিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা

প্রকাশিত: ০১:০৯, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:১০, ২২ জুলাই ২০২৫

বিশ্বজুড়ে ‘সেক্সটর্শন’-এর অস্ত্র হয়ে উঠছে এআই, প্রাণ দিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা

ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তৈরি করা ভুয়া নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিতে আত্মহত্যা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিশোররা। এই প্রবণতা এখন এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পর্যন্ত বিষয়টিকে ‘জাতীয় সংকট’ হিসেবে দেখছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির ১৬ বছর বয়সী কিশোর এলিজা হিকক আত্মহত্যা করে। পরে জানা যায়, কিছু অপরিচিত মানুষ তাকে ভুয়া নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৩ হাজার ডলার চাঁদা দাবি করেছিল। ছবি গুলো বাস্তবে তোলা না হলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

এ ঘটনাটি প্রকাশ করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। তারা জানায়, বিশ্বের বহু শিশু-কিশোর এখন এমন ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছে, যেখানে এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া অশ্লীল ছবি।

‘স্ট্রিপার অ্যাপস’ ভয়াবহ ছড়িয়ে পড়ছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘স্ট্রিপার অ্যাপ’ নামে পরিচিত কিছু সফটওয়্যার এখন সহজেই কোনো ব্যক্তির জামাকাপড় ডিজিটালি মুছে দিয়ে তাকে নগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করতে পারে। এসব অ্যাপ মূলত আগে সেলিব্রিটিদের লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হলেও, এখন তা শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এফবিআই বলছে, ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোররাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই হুমকির পরিণতি হয় আত্মহত্যায়। থর্ন (Thorn) নামে শিশুদের অনলাইনে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত একটি সংস্থা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজন এমন ভুয়া নগ্ন ছবির শিকার হয়েছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়ছে

এআই-নির্ভর এই অপরাধ দমনে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। হিককের বাবা জন বারনেট মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অপরাধীরা সুসংগঠিত, অর্থশালী এবং নিষ্ঠুর। তাদের জন্য আসল ছবি দরকার নেই, তারা নিজেরাই ছবি তৈরি করে এবং ব্ল্যাকমেইলের অস্ত্র বানিয়ে ফেলে।’

‘পেডোফাইল ম্যানুয়াল’ ও শিশু নির্যাতনের নির্দেশনা

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (IWF) জানিয়েছে, তারা অনলাইনে এমন এক ‘পেডোফাইল ম্যানুয়াল’ খুঁজে পেয়েছে যেখানে স্পষ্টভাবে শিশুদের ব্ল্যাকমেইলের কৌশল হিসেবে স্ট্রিপিং অ্যাপ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া আছে।

মুনাফার জগৎ: কোটি ডলারের বাজার

এআই-ভিত্তিক এসব ভুয়া ছবি তৈরির সফটওয়্যার এখন কোটি ডলারের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। Indicator নামে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৮৫টি ওয়েবসাইট এমন অ্যাপ বিক্রি করে বছরে প্রায় ৩৬

মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। এর মধ্যে ১৮টি সাইট ২০২৫ সালের মে মাসের আগের ছয় মাসে ২.৬ থেকে ১৮.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

এই সাইটগুলো চালাতে তারা আমাজন, গুগল এবং ক্লাউডফ্লেয়ারের মতো বড় টেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার করছে, যার ফলে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এড়িয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্পেনে ক্লাসমেট ও শিক্ষকদের টার্গেট

স্পেনে এক জরিপে দেখা গেছে, পাঁচজনের মধ্যে একজন কিশোর-কিশোরী ভুয়া নগ্ন ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার শিকার হয়েছে। দেশটির পুয়ের্তোলানো শহরে তিন কিশোর এআই দিয়ে সহপাঠী ও শিক্ষকদের ছবি বিকৃত করে তা স্কুলে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় স্প্যানিশ প্রসিকিউশন বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ

যুক্তরাজ্য এ বছর ভুয়া নগ্ন ছবি বা ভিডিও তৈরি ও ছড়ানোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রেও এমন আইন পাশ হয়েছে, যেখানে কারো সম্মতি ছাড়া ইমেজ প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তবু এসব সাইট একের পর এক গজিয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেন একটি অক্টোপাসের প্রতিটি শাখা কাটলেও, নতুন শাখা আবার গজিয়ে ওঠে।’

 

সূত্র: https://romea.cz/en/world/ai-is-becoming-a-global-instrument-of-sextortion-threats-of-which-are-leading-to-an-alarming-number-of-youth-suicides

রাকিব

×