
ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে নতুন করে গুঞ্জন ছড়িয়েছে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে।
‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে দুর্ঘটনার আগের দিন একটি পোস্টে ভবিষ্যদ্বাণীধর্মী সতর্কবার্তা দেখা যায়।
এই স্ট্যাটাসটি ছিল ২০ জুলাইয়ের। যেখানে দাবি করা হয়, ‘একটি বিদ্যালয়ের বিল্ডিং ধ্বসে পড়বে, অনেক শিশুর প্রাণহানি ঘটবে। এমনটা ঘটবে বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের দূর্বল রক্ষণাবেক্ষনের কারণে।’
ব্যস! সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমেরি ভবনে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরেই অনেকে দাবি করতে শুরু করেন, হয়তো এই ঘটনার সঙ্গে স্ট্যাটাসের কোনো যোগসাজেশ রয়েছে।
তবে পোস্টটিতে বাংলাদেশ, ঢাকা, বা মাইলস্টোন স্কুলের নাম কোথাও সরাসরি উল্লেখ ছিল না। এমনকি ঘটনাটি কোথায় ঘটবে, তাও নির্দিষ্ট করা হয়নি।
পেজটির পরিচয় ঘিরে রয়েছে ধোঁয়াশা। পরিচালকদের কেউই মুখ দেখায় না, একটি বিশেষ মুখোশ পরা অবস্থায় ভিডিও বা ছবি প্রকাশ পায়। লোকেশন হিসেবে লেখা রয়েছে ‘হাওয়াই’, তবে এটি কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, ওই একই পেজ থেকে উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরই অপর এক স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, তারা আগেই সতর্ক করেছিল। একদিন আগেই এমন কিছু ঘটবে, সেটার আগাম বার্তা দিয়েছিল।
কিন্তু হঠাৎ করেই পেইজটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই সুযোগে নিজেদের ফেসবুক পেজে কিছু অনুসারী বাড়িয়ে নেওয়া। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরণের ভীতি সৃষ্টি করা। ধারণা করা হচ্ছে পেইজটির পরিচালক আইডিগুলো ডিয়েক্টিভেট করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ওই একই পেজ থেকে আরও একটি স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়- বাংলাদেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বোমা বিস্ফোরিত হবে। এটি হতে পারে কোনো হোটেল কিংবা হাসপাতালে।
মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুলস্থুল শুরু হয়। অনেকেই তাদের সেই পোস্ট শেয়ার করে এক ধরণের আতঙ্ক-উদ্বিগ্নের কথাও প্রকাশ করেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির জানিয়েছেন, এটি অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। অ্যানোনিমাস-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যে ফেসবুক পেজ দেয়া আছে সেটি এই পেজ নয়।
এছাড়াও এই পেজটি ঘেঁটে জানা গেছে, এটি একটি অনলাইন জুয়ার পেজ। মূলত অনলাইন জুয়া প্রমোট করা (টিকেট বিক্রির), নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারা অনলাইন গেমিং বা জুয়া সংক্রান্ত পোস্ট দেয়।
তিনি আরও জানান, এই পেজ থেকে পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরে যখন বুঝতে পেরেছে তারা বাংলাদেশিদের এটেনশন পাচ্ছে, (বিকাল থেকে তাদের ফলোয়ার ২ লাখের কাছাকাছি থেকে ৩ লাখের ওপরে উঠেছে) তখন একের পর পর বাংলাদেশ বিষয়ক পোস্ট দেয়া শুরু করেছে। এছাড়াও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভয়ঙ্কর কিছু বাংলাদেশের মার্কেটগুলোতে ঘটবে বলেও ভবিষ্যদ্বানী করেছে। একইসাথে তাদের আরও নানান জুয়ার পেজ প্রমোট করা শুরু করেছে বাংলাদেশি নতুন ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে। আহ্বান জানাচ্ছে দ্রুত ফলোয়ার হওয়ার জন্য। ফলে এ ধরণের ফেসবুক পেজের কোনো ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না।
সানজানা