
ছবি: প্রতীকী
সকালের সময়টা প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। কারণ, এই সময়টি দিন শুরুর একটা ভিত্তি গড়ে তোলে। শিশুদের মানসিক বিকাশে সকালের প্রথম ১ ঘণ্টা খুব বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একে বলা যায় একটি স্বর্ণালী সময়, যখন শিশুর মন সবচেয়ে সতেজ থাকে এবং শিখতে প্রস্তুত থাকে।
সকালের ঘুম থেকে উঠে শিশুর মস্তিষ্ক থাকে বিশ্রামপ্রাপ্ত এবং প্রভাবগ্রহণে সক্ষম। এই সময় তাকে যদি কিছু ইতিবাচক অভ্যাস শেখানো যায়, তাহলে তা তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক হয়। যেমন, সকালে উঠে মুখ ধোয়া, দাঁত ব্রাশ করা, বিছানা গুছিয়ে রাখা—এগুলো শিশুকে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ শেখায়। অভ্যাসগুলো বারবার চর্চার মাধ্যমে শিশুর মনোসংযোগ বাড়ে এবং দৈনন্দিন কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
সকালের নীরব পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক আলো শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশান্ত রাখে। সকালে হালকা ব্যায়াম বা খোলা জায়গায় হাঁটা শিশুর শরীরের পাশাপাশি মনকে চাঙা করে তোলে। শারীরিক আন্দোলন শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, ফলে মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শেখার ক্ষমতা বাড়ে। এটা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
এই সময়টায় শিশুর সঙ্গে কিছু সময় কাটানো খুব প্রয়োজন। বাবা-মা যদি সকালের এক ঘণ্টা সময় শিশুর সঙ্গে গল্প বলা, বই পড়া কিংবা খেলায় ব্যয় করেন, তাহলে শিশুর আবেগীয় সম্পর্ক গভীর হয়। শিশু তখন নিরাপত্তা অনুভব করে এবং নিজের ভাব প্রকাশে উৎসাহ পায়। এতে করে শিশুর ভাষাজ্ঞান, চিন্তাশক্তি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। বাবা-মায়ের সংস্পর্শ শিশুর মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সকালে পুষ্টিকর নাস্তা খাওয়ার সময়টিও এই এক ঘণ্টার মধ্যে পড়ে। শিশু যদি নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়, তবে তার মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে এবং তা মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। বিশেষ করে প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার শিশুর মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খালি পেটে স্কুলে যাওয়া শিশুরা ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, ফলে মানসিক বিকাশে বাধা পড়ে।
সকালে স্কুলে যাবার আগে শিশুরা যেসব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যায়, তা দিনের বাকি সময়টিকে প্রভাবিত করে। যদি সকালটা আনন্দময়, ভালোবাসাময় ও স্নেহপূর্ণ হয়, তবে শিশু সারাদিন ভালো মনোভাব নিয়ে কাটাতে পারে। কিন্তু যদি সকালে হুটোপুটি, রাগারাগি বা ভয়ভীতির মধ্যে দিয়ে দিন শুরু হয়, তাহলে তার মনমেজাজ খারাপ হয়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়ে তার মানসিক বিকাশে।
এই সময়টায় শিশু কিছু সৃজনশীল কাজ যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া, রঙের খেলা—এই ধরনের কাজে অংশ নিলে তার কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ে। সকালের তাজা মন এসব কাজ করতে আগ্রহী থাকে এবং তার মাধ্যমে শিশুর চিন্তাশক্তি বিকশিত হয়।
শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন সকালের প্রথম ১ ঘণ্টা একটি মূল্যবান সময়। এই সময় যদি সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে শিশুর মধ্যে আত্মনির্ভরতা, মনোসংযোগ, আবেগীয় স্থিতিশীলতা ও সৃজনশীলতা তৈরি হয়। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত সকালটা শিশুর জন্য আনন্দদায়ক, শিক্ষণীয় এবং ভালো অভ্যাসে পূর্ণ করে তোলা। এই ছোট পরিবর্তন ভবিষ্যতে শিশুর বড় মানসিক গঠনে বড় অবদান রাখতে পারে।
এম.কে.