
ছবি: সংগৃহীত
সাইবেরিয়ার বরফঢাকা বেলায়া এয়ারবেস— রুশ সামরিক ঘাঁটির এই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভেসে উঠলো এক ভয়ঙ্কর গর্জন। সেই শব্দ ৩৮০০ কিলোমিটার দূরের ইউক্রেনে গিয়ে বিধ্বংসী ক্ষতির বার্তা দিল।
একদিকে যখন আলোচনায় ছিল যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা, ঠিক তখনই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে আকাশে উড়লো রাশিয়ার টুপলেফ ২৯৫ বোমারু বিমান— ন্যাটো যাকে ডাকে "বিয়ার" নামে।
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিমানগুলো বেলায়া এয়ারবেস থেকে উড়ে এসে ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। বেলায়া থেকে কিয়েভের দূরত্ব প্রায় ৩৮০০ কিলোমিটার।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা শুধু সামরিক কৌশল নয় বরং এক রণকৌশলগত বার্তা— সেটা হচ্ছে, রাশিয়া যেকোনো সময় যেকোনো দূরত্বে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
টুপলেফ ২৯৫, এটি কোল্ড ওয়ার যুগের স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান। এটি একাধারে চারটি পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে। আবার এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে IL-78 এয়ার রিফুয়েলার, যার সাহায্যে এটি মধ্যপথে অবতরণ ছাড়াই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যে, এই হামলা ছিল গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার জবাব। ইউক্রেন সম্প্রতি মস্কোসহ রাশিয়ার অভ্যন্তরে অন্তত নয়টি অঞ্চলে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
যদিও মস্কোর দাবি, রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ১৫৮টি হামলা মোকাবিলা করেছে। মস্কোর মেয়র জানান, এসব ড্রোনের একটিও লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারেনি এবং কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি।
তবুও বিশাল সংখ্যক ড্রোন প্রতিরোধ করা রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
তবে মূল আকর্ষণ এখন টুপলেফ ২৯৫ এর দূরপাল্লার হামলা। সামরিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে পুতিন মূলত দুটি বার্তা দিয়েছেন—
একদিকে ইউক্রেনকে জানিয়ে দিলেন যে, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা এখনো সম্পূর্ণ অটুট।
অন্যদিকে আমেরিকা তথা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিলেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং ন্যাটো অনিশ্চয়তার মুখে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শান্তি আলোচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আলোচনায় প্রস্তুত। তবে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করাই রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য।
এসব আলাপের মধ্যেই হামলা-পাল্টা হামলা চলছেই।
এই অবস্থায় ইউক্রেন জানিয়ে দিয়েছে— ড্রোন ছাড়া কোনোভাবেই রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
শেখ ফরিদ