
ছবি: সংগৃহীত।
চুল পড়া কিংবা পাতলা হয়ে যাওয়া চুল আজকাল অনেকেরই দুশ্চিন্তার কারণ। ব্যয়বহুল ট্রিটমেন্ট বা বাজারের নতুন ‘মিরাকল’ পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। তবে প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী একটি বিকল্প হয়ে উঠছে সাধারণ একটি ভেষজ উপাদান—রোজমেরি তেল।
রান্নাঘরের পরিচিত ভেষজ রোজমেরি গাছ থেকেই তৈরি হয় এই এসেনশিয়াল তেল। প্রাচীনকাল থেকেই এটি ঔষধি গুণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রোজমেরি তেল নিয়মিত মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ফলে চুলের গোড়ায় পৌঁছায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন—যা নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মাথার ত্বকের রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে চুলের গোঁড়াগুলো পুষ্টি পায় এবং নতুন চুল গজাতে পারে। এছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান, যা খুশকি বা চুলকানির মতো সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
এমনকি কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে, পুরুষদের অ্যান্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়া বা প্যাটার্ন বাল্ডনেসে এটি মিনোক্সিডিলের (বিখ্যাত হেয়ার রিগ্রোথ ওষুধ) মতো কার্যকর হতে পারে।
বাড়িতেই সহজে রোজমেরি তেল ব্যবহার করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটি সরাসরি লাগানো যাবে না—একটি ‘ক্যারিয়ার অয়েল’-এর (যেমন: নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা জোজোবা অয়েল) সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।
ধাপে ধাপে ব্যবহার পদ্ধতি:
তেল মিশ্রণ তৈরি করুন:
২ টেবিল চামচ ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে ৪-৫ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মেশান।
তেল হালকা গরম করুন (ঐচ্ছিক):
ইচ্ছা হলে মিশ্রণটি কয়েক সেকেন্ড মাইক্রোওভেনে হালকা গরম করতে পারেন, তবে যেন বেশি গরম না হয়।
স্ক্যাল্পে লাগান:
চুল ভাগ করে আঙুলের ডগা দিয়ে তেলটি মাথার ত্বকে লাগান। মূলত চুলের গোড়ায় পৌঁছানোই লক্ষ্য।
ম্যাসাজ করুন:
আঙুলের নরম অংশ ব্যবহার করে ধীরে ধীরে গোলভাবে ম্যাসাজ করুন। অন্তত ৫–১০ মিনিট সময় দিন।
তেল রেখে দিন:
অন্তত ৩০ মিনিট তেলটি মাথায় রাখুন। চাইলে রাতে রেখে ঘুমাতে পারেন—তবে বালিশে তোয়ালে দিতে ভুলবেন না।
ধুয়ে ফেলুন:
এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২–৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
রাতারাতি চুল গজাবে না—এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তবে কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে নিয়মিত ব্যবহারে অনেকেই চুল পড়া কমে যাওয়া, স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য উন্নত হওয়া, এমনকি নতুন চুল গজানোর লক্ষণও লক্ষ্য করেছেন।
কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ:
নিয়মিত থাকুন: রোজমেরি তেল ম্যাসাজকে সেলফ কেয়ারের অংশ করে তুলুন।
মাত্রা বজায় রাখুন: বেশি তেল ব্যবহার না করাই ভালো—মাত্র কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।
অ্যালার্জি টেস্ট করুন: ব্যবহারের আগে হাতের পাতায় টেস্ট করে নিন।
ধৈর্য ধরুন: চুল গড়ে মাসে গড়ে আধা ইঞ্চি বাড়ে—সময় দিন।
যারা ব্যবহার করতে পারেন:
যাদের চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা অতিরিক্ত ঝরে যাচ্ছে, যাদের মাথার ত্বক শুষ্ক বা খুশকিযুক্ত, যাদের চুল বড় করতে আগ্রহ আছে, স্ট্রেস বা সন্তান জন্মের পর চুল পড়ায় ভুগছেন, তবে যদি চুল পড়া থাইরয়েড বা পুষ্টিহীনতার কারণে হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চুলের যত্নে যখন বাজার সয়লাব দামি ও বিভ্রান্তিকর প্রোডাক্টে, তখন রোজমেরি তেল হতে পারে একটি সহজ, প্রাকৃতিক এবং কার্যকর বিকল্প। কয়েক ফোঁটা তেল, হালকা ম্যাসাজ এবং ধৈর্য—এই ছোট অভ্যাসই ফিরিয়ে আনতে পারে আপনার চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং আত্মবিশ্বাস।
মিরাজ খান