ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার আনিশার প্রবাসী পিতা বনি আমিন

এমন জানাজা পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি

মাইলস্টোন ট্রাজেডিতে নিহত আনিশার জানাজা বাগেরহাটে সম্পন্ন

বাবুল সরদার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২২ জুলাই ২০২৫

এমন জানাজা পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি

ছবিঃ সংগৃহীত

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল থেকে নারী-পুরুষ-যুবা-শিশু নির্বিশেষে অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ ছুটে এসেছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী কুনিয়ায়। এ গ্রামের কুয়েত প্রবাসী বনি আমিন ও রূপা দম্পতির মেয়ে শিশু ফাতেমা আক্তার আনিশার লাশ এসেছে শুনে তাঁরা ছুটে আসেন। সবার চোখে মুখে শোকের ছায়া। অব্যক্ত কষ্টে তাদের চোখেও পানি ঝরছে। নয় বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে প্রশিক্ষণ বিমান ওই স্কুলের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হলে মেধাবী ফাতেমা আক্তার মারা যায়।

এদিন দুপুরের দিকে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অকালে চিরবিদায় নেওয়া শিশু ফাতেমাকে অব্যক্ত শোকবিহ্বল পরিবেশে কুনিয়া কাওমি মাদ্রাসা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তার প্রবাসী পিতা বনি আমিন মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কুয়েত থেকে দেশে আসেন। মেয়ের জানাজায় শরিক হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অনেক সেবা-শুশ্রুষা করার পর চেতনা ফিরতেই তিনি অস্ফুটস্বরে বলতে থাকেন, ‘এমন জানাজা পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। ইচ্ছে ছিল তোকে ডাক্তারি পড়াবো। সব শেষ করে তুই কী বলে চলে গেলি আমার মা... মারে...’

প্রথম সন্তান, একমাত্র মেয়ে ফাতেমার দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তার বাবা-মা ঘরের ভেতর পৃথক কক্ষে যান। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। ছোট দুই ছেলেকে সামলাচ্ছেন স্বজনরা। এ সময় পাশে থাকা চাচি মুক্তা বেগম ও মামা লিওন মীর ভাগ্নে ওসমানকে কোলে নিয়ে আনিশা আনিশা (ফাতেমার ডাক নাম) বলে বিলাপ করছিলেন।

নিহত ফাতেমার বাবার মামাতো ভাই সৈয়দ নোমান হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় আমি মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ছিলাম। খবর শুনে আমিসহ অনেকেই উদ্ধারকাজে অংশ নিই। আমি তখনও জানতাম না আমার ভাতিজি আর নেই।’

সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে কলাতলা ইউনিয়নের কুনিয়া গ্রামের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহত ফাতেমা আক্তারের ফুফু ইয়াসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা ঢাকায় থাকত। আমার ভাইঝি ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। কালকে (সোমবার) বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়। ওকে আমরা প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, পরে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রাত ৮টার দিকে পাই। এরপর ভোর রাতের দিকে ওকে নিয়ে আসা হয়।’

‘ও (ফাতেমা) শান্তশিষ্ট এবং লেখাপড়ায় ভালো ছিল। একবার বললেই ওর সব কিছু মনে থাকত। ছোটবেলা থেকেই ওর স্বপ্ন ছিল “ডাক্তার” হওয়া। আমাদেরও স্বপ্ন ছিল তাকে ডাক্তার বানাবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমাদের সবার “চোখের মনি” অকালে ঝরে গেল। ফাতেমা সবার বড়, ওর ছোট দুটো ভাই আছে। ওর স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ও কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। আজকে সে লাশ হয়ে বাড়ি এলো। আমরা আসলে কী যে বলব, বুঝতে পারছি না। আমাদের বলার আর ভাষা নেই।’

নিহত ফাতেমার চাচাতো ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সকালেই ফাতেমার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমি জানাজা পড়িয়েছি। ভাষায় বলতে পারবো না, কতটা কষ্ট হয়েছে। জানাজা শেষে গ্রামের কুনিয়া কাওমি মাদ্রাসা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত: সোমবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ফাতেমাসহ একাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

ইমরান

×