ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন বাংলাদেশে বৃহদান্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না?

প্রকাশিত: ০২:০৩, ২৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:০৩, ২৩ জুলাই ২০২৫

কেন বাংলাদেশে বৃহদান্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না?

ছবি: সংগৃহীত

বৃহদান্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার (colorectal cancer) পৃথিবীর অনেক দেশে সচেতনতা, স্ক্রিনিং ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হলেও বাংলাদেশে এখনো এটি নীরব ঘাতক হিসেবে বিরাজ করছে। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে আসেন, ততক্ষণে ক্যান্সার অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।

🛑 প্রাথমিক লক্ষণ প্রায় অনুপস্থিত বা উপেক্ষিত

প্রথম ও প্রধান কারণ হলো—এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ খুবই মৃদু বা অস্পষ্ট। মলত্যাগে রক্ত, হালকা পেটব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যকে অনেকেই সাধারণ সমস্যা মনে করে অবহেলা করেন। ফলে ক্যান্সার তখন নিজের মতো করেই দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

🏥 স্ক্রিনিংয়ের অভাব ও সচেতনতার ঘাটতি

উন্নত দেশে ৪৫ বা ৫০ বছর বয়সের পর নিয়মিত কোলোনোস্কোপি করা বাধ্যতামূলক বা সুপারিশকৃত হলেও বাংলাদেশে এই ব্যবস্থাটি এখনও সীমিত। সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্ক্রিনিং সেবা নেই, বেসরকারি হাসপাতালে খরচ বেশি—ফলে সাধারণ মানুষ এই পরীক্ষা করান না।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসচেতনতা ও শিক্ষার অভাবের কারণে মানুষ এই রোগ সম্পর্কেও খুব কম জানে।

অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও চিকিৎসা বিমার অপ্রতুলতা

বাংলাদেশে অনেক রোগীই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে শুরুতে ডাক্তারের কাছে যান না। এমনকি উপসর্গ থাকলেও একবার সাধারণ ওষুধ খেয়ে ‘সমাধান’ করার প্রবণতা দেখা যায়। ক্যান্সার শনাক্তে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা যেমন: কোলোনোস্কোপি, বায়োপসি, সিটি স্ক্যান—এইসব অনেকের নাগালের বাইরে।

প্রাথমিক চিকিৎসক পর্যায়ে অবহেলা বা ভুল ব্যাখ্যা

গ্রাম বা উপজেলা পর্যায়ে থাকা চিকিৎসকেরাও অনেক সময় পেটের ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যকে গুরুত্ব দেন না বা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বিবেচনায় নেন না। ফলে রোগীর দেরিতে রেফারাল হয় বিশেষজ্ঞের কাছে।

বংশগত কারণ থাকলেও নজর দেওয়া হয় না

পরিবারে কারো এই ধরনের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলেও অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না বা নিজের জন্য আগাম পরীক্ষা করান না। এটি ক্যান্সার শনাক্তে বড় একটি বাধা।

✅ সমাধানে যা করা জরুরি

🔹 জাতীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু করা

🔹 গণমাধ্যমে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো

🔹 গ্রাম-শহর সব জায়গায় স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা সুবিধা

🔹 চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও রেফারাল গাইডলাইন

🔹 স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্ত্রের ক্যান্সার বিষয়ে অন্তর্ভুক্তি

বাংলাদেশে বৃহদান্ত্র ও মলদ্বারের ক্যান্সার সময়মতো ধরা না পড়ার পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চিকিৎসাব্যবস্থাগত একাধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই ‘নীরব ঘাতক’কে রুখতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগতভাবে।
 

Mily

×