
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ নিয়ে যখন উদ্বেগ বাড়ছে, ঠিক তখনই এর সমাধানে বড় সাফল্য পেয়েছে জার্মানির একটি অলাভজনক স্টার্ট-আপ। প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি বিশেষ জেল উদ্ভাবন করেছে, যা পানির মধ্য থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণে দারুণ কার্যকর। ইতোমধ্যেই এই জেলটি দেশটির বিভিন্ন পানি শোধনাগারে ব্যবহার শুরু হয়েছে।
‘ভাসা ৩.০’ নামের স্টার্ট-আপটির প্রতিষ্ঠাতা কাটরিন শুয়েন জানান, পরিবেশবান্ধব এই হাইব্রিড সিলিকা জেল কার্বন ও সিলিকা দিয়ে তৈরি। এটি পানির মধ্যে থাকা অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলোকে একত্রিত করে জমাটবদ্ধ করে ফেলে। ফলে সেগুলো পানির পৃষ্ঠে উঠে আসে এবং সহজেই আলাদা করে ফেলা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত জেল এক প্রকার জাদুর আঠার মতো কাজ করে। এটি অনেক ছোট ছোট কণাকে গুচ্ছাকারে রূপান্তর করে দৃশ্যমান করে তোলে।’ গবেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিক পানিতে আসে প্রসাধনী, কাপড় ও শিল্পবর্জ্যের মাধ্যমে। এর মধ্যে শিল্প কারখানাই সবচেয়ে বড় উৎস।
গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির একটি বর্জ্য পানি শোধনাগারে নিয়মিত নমুনা পরীক্ষা করেন গবেষকরা। বিশুদ্ধ পানি ফের পরিবেশে ছাড়ার আগে এতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
কাটরিন আরও জানান, দুই বছরের প্রচেষ্টায় তারা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পানির নমুনায় বিশেষ ফ্লুরোসেন্ট মার্কার ব্যবহার করি, যা নির্দিষ্ট আলোকতরঙ্গের সংস্পর্শে সক্রিয় হয়। এতে সহজেই বোঝা যায় পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ।’
এই জেল প্রযুক্তিকে আরও বিস্তৃত করতে কাটরিন প্রতিষ্ঠা করেন অলাভজনক স্টার্ট-আপ, যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কোম্পানিকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার অংশীদার একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে, আর জেলটিও বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণ নয়, অপসারিত কণাগুলো পরিশোধন করে পুনর্ব্যবহার করাও সম্ভব। এর ফলে তৈরি হচ্ছে একটি ‘সার্কুলার ইকোনমি’, যা পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক—আর সেটিই প্রযুক্তিটিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
রাকিব