
ছবি: সংগৃহীত
রাতে আপনি যতই ঘুমিয়েছেন বা যতই আগে শুয়েছেন, তবু সকালে ঘুম ভেঙে জেগে উঠতেই মনে হয়েছে এ যেন এক কঠিন লড়াই। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, সমস্যাটা হয়তো আমাদের ঘুমের অভ্যাসে নয়, বরং ওঠার সময় মস্তিষ্কের ভিতরে কী ঘটছে তার ওপর নির্ভর করে।
নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্সের বিজ্ঞানীরা ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ২০ জন ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন, যেখানে ১,০০০ এর বেশি ওঠার সময়ের ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে—কিছু স্বাভাবিকভাবে এবং কিছু অ্যালার্ম দিয়ে জাগিয়ে।
গবেষক দলের একজন অন্যতম সদস্য নিউরোসায়েন্টিস্ট ফ্রান্সেসকা সিকলারির মতে, ‘এই প্যাটার্ন প্রতিটি ওঠার সময় খুবই সঙ্গতিপূর্ণ ছিল এবং এটি ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।’
প্রতিটি অংশগ্রহণকারী একটি বিশেষ ক্যাপ পরেছিলেন, যাতে ২৫৬টি সেন্সর ছিল যা প্রতি সেকেন্ডে মস্তিষ্কের সিগন্যাল ক্যাপচার করত। তারা দেখেছেন, মস্তিষ্কের ওঠার পদ্ধতি নির্ভর করে ঘুমের কোন পর্যায়ে মানুষ উঠছে তার ওপর।
যখন কেউ REM ঘুম থেকে ওঠে—যখন স্বপ্ন দেখা হয়—তারা বেশি ক্লান্ত ও ধীরগতি অনুভব করেন। কারণ তখন মস্তিষ্ক প্রথমে সামনের অংশ সক্রিয় হয়, যা চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেবার কাজে সাহায্য করে। এরপর এক ধরনের ধীর গতির তরঙ্গ মস্তিষ্কের পেছনের দিকে যায়, যেখানে আমরা দেখার তথ্য প্রক্রিয়া করি।
অপরদিকে, যারা নন-REM ঘুম থেকে ওঠেন তাদের মস্তিষ্কের কাজের ধরণ একটু আলাদা। তরঙ্গটি মাঝখান থেকে শুরু হয়ে একই দিক অতিক্রম করে, যা তুলনামূলক স্বাভাবিক মনে হতে পারে।
এই গবেষণা চিকিৎসকদের জন্য সাহায্যকারী হতে পারে, কেন কেউ একই পরিমাণ ঘুমের পরও সতেজ বোধ করে আবার কেউ ক্লান্ত থাকে তা বোঝার ক্ষেত্রে। এছাড়া, ঘুমের ব্যাধি বা সারাক্ষণ ক্লান্ত থাকার সমস্যা নিয়ে গবেষণায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
সিকলারি বলেন, ‘স্বাভাবিক ওঠার সময় মস্তিষ্কের কার্যক্রম কেমন তা জানা থাকলে আমরা অস্বাভাবিক ওঠার সময়ের তুলনা করতে পারব।’ যদিও আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে শরীরের নড়াচড়ার মতো অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলো কীভাবে ঘুমে প্রভাব ফেলে তা বুঝতে, তবে এই গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে—আমাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠার ধরনও ঘুমের পরিমাণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
রাকিব