ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

হালকা ব্যায়াম করলেই হাঁপিয়ে যান? এখনই ফুসফুস পরীক্ষা করান

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৩ জুলাই ২০২৫

হালকা ব্যায়াম করলেই হাঁপিয়ে যান? এখনই ফুসফুস পরীক্ষা করান

ছ‌বি: প্রতীকী

অনেকেই আছেন যাঁরা সামান্য হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করলেই দম ধরে রাখতে পারেন না। অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পরই হাঁপিয়ে যান, বুক ধড়ফড় করে, ঘাম হয়, মাথা ঘোরে বা ক্লান্তি অনুভব করেন। কেউ কেউ এটাকে বয়সের দোষ মনে করেন, কেউ ভাবেন শরীর দুর্বল হয়ে গেছে বা খাওয়া-দাওয়া ঠিক নেই। কিন্তু এই লক্ষণগুলো ফুসফুসের সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই এসব উপসর্গকে অবহেলা করা ঠিক নয়। বরং দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ফুসফুসের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

ফুসফুস আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাইরে বের করে দেয়। যদি ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। ফলে আমাদের চলাফেরা বা ব্যায়ামের সময় দ্রুত ক্লান্তি আসে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে যাঁরা আগে কখনও এমন সমস্যায় ভোগেননি, তাঁদের মধ্যে হঠাৎ করে এই উপসর্গ দেখা দিলে সেটা আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।

বিভিন্ন কারণে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ধূমপান এর একটি বড় কারণ। ধূমপানে ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুনালীগুলো নষ্ট হয়ে যায়, ফুসফুসের কোষে দাগ পড়ে, ফুসফুস ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে সমস্যা হয়। এমনকি ধূমপানের আশপাশে থাকলেও (প্যাসিভ স্মোকিং) ফুসফুসে ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়া দীর্ঘদিনের ধুলাবালি, দূষিত বাতাসে বসবাস, শিল্পকারখানার কেমিকেলযুক্ত পরিবেশেও ফুসফুসে ক্ষতি হতে পারে। যারা অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ), নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত ছিলেন বা আছেন, তাদের জন্যও সামান্য ব্যায়ামে হাঁপিয়ে যাওয়া একটি সাধারণ উপসর্গ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে শ্বাসনালিতে প্রদাহ হয় বা বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, যার কারণে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যায়।

শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদী কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও এখন এই সমস্যাটি বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেকে করোনার পর সুস্থ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাসকষ্ট বা দুর্বলতা অনুভব করেন। তাদের ফুসফুসে করোনার প্রভাবে দাগ পড়ে থাকতে পারে বা ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই হালকা ব্যায়ামে হাঁপিয়ে যাওয়া যদি করোনার পর থেকে শুরু হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

অনেকেই বিষয়টি নিয়ে লজ্জা পান বা ভয় পান যে চিকিৎসক দেখালে হয়তো বড় কোনো সমস্যা ধরা পড়বে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, রোগ যত দ্রুত ধরা পড়ে, চিকিৎসা তত বেশি কার্যকর হয়। বিশেষ করে ফুসফুসের সমস্যা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়, তাহলে জীবনযাত্রা ও ওষুধের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

বর্তমানে সহজলভ্য কিছু পরীক্ষার মাধ্যমেই ফুসফুসের কার্যক্ষমতা যাচাই করা যায়। যেমন: স্পাইরোমেট্রি, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে, ব্লাড অক্সিজেন লেভেল মাপা, বা হাঁটার সময় অক্সিজেনের পরিমাণ পরিবর্তন বোঝার জন্য ছয় মিনিট ওয়াক টেস্ট। এসব পরীক্ষায় বোঝা যায় ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো বাধা আছে কিনা।

প্রতিরোধের দিক থেকেও কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। যেমন ধূমপান পরিহার করা, নিয়মিত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকা, মাস্ক ব্যবহার করা, ফুসফুসের জন্য উপকারী ব্যায়াম (যেমন শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম) করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার বা ওষুধ সেবনেও উপকার পাওয়া যায়।

হালকা ব্যায়াম করলেই যদি আপনি হাঁপিয়ে যান বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে সময় নষ্ট না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে নিন। ফুসফুসের রোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তত তাড়াতাড়ি তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আর সুস্থ ফুসফুস মানেই সুস্থ জীবন। অবহেলা নয়, এখনই সতর্ক হোন।

এম.কে.

×