
সাতকানিয়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় সড়ক সংস্কার, বছর না যেতেই বেহাল দশানির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৮ মাস না যেতেই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া কাঞ্চনা ইউনিয়নের শাহজব্বারিয়া সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।ফলে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র তুলাতলী চরতী ইউনিয়ন থেকে চট্টগ্রাম বাঁশখালী পটিয়া আনোয়ারা, চন্দনাইশ,পণ্যবাহী যান চলাচলের প্রধান সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা সড়কটি বেশিরভাগ সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনা।
অপরদিকে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়ন থেকে আমিলাইশ সরোয়ার বাজার যাওয়ার সড়কটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। নির্মাণে ব্যয় করা ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা এক বছরের মধ্যে জলাঞ্জলি হয়ে গুটিগুটি পাথর উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, মাত্র ৮ মাস আগে নির্মিত সড়কটি এখন এমনভাবে কার্পেটিং ওঠে যাচ্ছে যে, আগামী আর এক বছর চলাচলের জন্য পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে যাবে। আসন্ন বর্ষায় সড়কটির অবস্থার আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার বেশ কিছু অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, এবং রাস্তার কিছু অংশ ফেটে গেছে। এই অবস্থায় সড়কটি শীঘ্রই চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
এলাকাবাসী জানান, সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সড়কটি উপজেলার কাঞ্চনা, ফুলতলা থেকে খোদার হাট এবং মনুফকির হাট হতে চরতী আল হেলাল আদর্শ ডিগ্রী কলেজ পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এর নির্মাণে কাসেম কনস্ট্রাকশন, সেবা কর্পোরেশন এলজিডি সাইক্লোন আমফান, প্রকল্পের অধীনে, ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বাজেট নির্ধারিত ছিল। তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাশেম কনস্ট্রাকশন ও সেবা কর্পোরেশন নির্মাণ কাজের সময় বেশ কয়েকবার নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়ে যায় এবং কাজ শেষ হওয়ার পরই সড়কটি নষ্ট হতে শুরু করে।
সাতকানিয়া এলজিইডি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার সড়ক সংস্কারে গত ছয় বছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়ন ২ কিলোমিটার শহ জব্বারিয়া সড়ক সেবা কর্পোরেশনের অধীনে সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সংস্কারের পর এক বছর না পেরোতেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে কাঞ্চনা ফুলতলা বাজার থেকে খুদার হাট সড়কটি ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সেই সড়কেও একই অবস্থা।
সাধারণ মানুষের দাবি,এত টাকা ব্যয় করে এক বছর পর বেহাল অবস্থা হলে রাস্তার কাজ করে কোন লাভ নাই, শুধু শুধু সরকারি টাকা দেশের সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন টেকসই মজবুত হয় এমন কাজ সরকারের কাছ থেকে আশা করছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মনুফকির হাট বাজার থেকে দূরদুরী স্টেশন আল হেলাল কলেজ প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত রোডে বড় বড় গর্ত। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বেশিরভাগ অংশে বিটুমিন উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মোটরবাইক, ভ্যানগাড়ি চলছে।
সাতকানিয়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেছেন, সড়কের এই পরিণতির কারণ বর্ষায় জলাবদ্ধতা। বিটুমিনের রাস্তায় পানি জমে থাকলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ৪ কিলোমিটার সড়কের যেসব স্থানে গভীর গর্ত হয়ে গেছে তারা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে তা ঠিক করবেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেবা কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা বলেন,আমাদের লোক পাঠিয়ে অলরেডি পরিদর্শন করেছি,যেখানে গর্ত বা বেশি সমস্যা হয়েছে তা আমরা শীঘ্রই ঠিক করে দিব। অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাসেম কন্ট্রাকশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রতিনিধি সাগর বলেন,আমাদের লোক পাঠিয়ে বিষয়টা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, এই বিষয়ে তেমন আমি অবগত নয়, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন প্রকল্পের আওতায় আবারও সংস্কার করা হবে। স্থায়ী ও টেকসইভাবে সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হব বলেও জানান তিনি।
আঁখি