ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

"ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে না" নিউইয়র্ক টাইমসের কলামে এই বিকৃত যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আলজাজিরা কলামিস্ট বেলেন ফার্নান্দেজ

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:১৫, ২৩ জুলাই ২০২৫

“না, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে না”, নিউইয়র্ক টাইমসের কলামে ব্রেট স্টিফেন্সের বিকৃত যুক্তি।  গতকাল নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত কলামে তিনি তার সর্বশেষ বিকৃত যুক্তি তুলে ধরেন, যার শিরোনাম ছিল “না, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে না”।

এ বিষয়ে আলজাজিরা কলামিস্ট বেলেন ফার্নান্দেজ বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস গণহত্যামূলক সাংবাদিকতা করছে। ফার্নান্দেজ আরও বলেন,  এমন এক সময়ে যখন জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে স্পষ্টভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তখন স্টিফেন্স দাবি করছেন, আসল সত্য তিনি জানেন এবং সেটি তিনি ব্যাখ্যা করবেন।

তিনি কলামের শুরুতেই একটি উসকানিমূলক প্রশ্ন তোলেন:
“যদি ইসরায়েলি সরকারের উদ্দেশ্য সত্যিই গাজাবাসীদের ধ্বংস করা হয়, তবে তারা আরও পদ্ধতিগত ও বহুগুণ বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি কেন?”

গাজা উপত্যকার অধিকাংশ অংশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা, হাসপাতাল, স্কুল, ঘরবাড়ি একে একে গুঁড়িয়ে দেওয়া এই নিখুঁত ধ্বংসযজ্ঞকেই কি স্টিফেন্স যথেষ্ট ‘পদ্ধতিগত’ বলে মনে করেন না?

স্টিফেন্স আরও বিস্ময় প্রকাশ করেন:
“যদি প্রকৃতই গণহত্যা চলত, তাহলে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি ‘শত-সহস্র’ হতো না কেন?”
তিনি উল্লেখ করেন যে, আনুষ্ঠানিক ফিলিস্তিনি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু সেটিও তার কাছে যথেষ্ট ভয়াবহ মনে হয় না।

এই হিসাব ছাড়াও ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১,৮৬,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এতসব সত্ত্বেও স্টিফেন্স ঘোষণা দেন “ইসরায়েল স্পষ্টভাবে গণহত্যা করছে না।”
জাতিসংঘের গণহত্যা সংজ্ঞার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি দাবি করেন, “আমি এমন কোনও প্রমাণ জানি না যা ইসরায়েলের পরিকল্পিতভাবে গাজান বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা প্রমাণ করে।”

এই বক্তব্যের যথার্থতা কতটা?
১৩ মাসে ১৭,৪০০ শিশু হত্যার পরও যদি বলা হয় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নয়’, তাহলে সেটি এমন এক দাবি যার তুলনা করা চলে মুরগির খামারের কসাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলা, “তারা তো ইচ্ছা করে মুরগি মারেনি”।

শুধু বোমা হামলাই নয়, ক্ষুধার্ত করে মারাও গণহত্যা।
মাত্র গতকাল গাজায় ১৫ জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ৪টি শিশু, অনাহারে মারা গেছে।
গত মে মাস থেকে শুরু করে ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)’ নামক এক বিতর্কিত খাদ্য সহায়তা প্রক্রিয়ার সময় ১,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তাদের অনেকেই ইসরায়েলি হামলার শিকার।

স্টিফেন্স এই ‘সহায়তা বিভ্রাট’কে ব্যাখ্যা করে বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ সহায়তা পরিকল্পনা বা ভুল করে টার্গেট করা বা প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিবিদদের বক্তব্য এসব গণহত্যার সংজ্ঞায় পড়ে না।”

কিন্তু তিনি একবারও উচ্চারণ করেন না যে, ইসরায়েল রাষ্ট্র নিজেই ছিল একটি গণহত্যার প্রকল্প ১৯৪৮ সালের আগে থেকেই ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের পরিকল্পনা চলেছে।
৭৫ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়, শত শত গ্রাম ধ্বংস হয় এটা ছিল পরিকল্পিত এক জাতিগত নির্মূল।

এখানেই থামেন না স্টিফেন্স। তিনি বলেন, “যদি ‘গণহত্যা’ শব্দটি তার ভয়াবহতা বজায় রাখতে চায়, তবে সেটিকে হালকাভাবে যে কোনও সামরিক পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যাবে না।”

কিন্তু বাস্তবতা হলো, যখন বিশ্ব মোড়লদের সমর্থনে ইসরায়েল গাজায় ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে, তখন নিউ ইয়র্ক টাইমসের মত সংবাদমাধ্যম যদি সেই অপরাধকে গোপন বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, তাহলে সেই সাংবাদিকতাকেও ‘গণহত্যামূলক’ বলা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।


(বিঃদ্রঃ- সম্পূর্ণ  নিউজটি 
বেলেন ফার্নান্দেজ- এর বক্তব্য থেকে অনুবাদিত)

Jahan

×